মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কতদূর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো?

কতদূর পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো?

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদ্স ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলাইমানির হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের দামামা বাজছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে। এ নিয়ে এরইমধ্যে ইরাকে একাধিক হামলার ঘটনাও ঘটেছে।

বুধবার ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দুটি সামরিক ঘাঁটি ইরবিল ও আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে ইরান। ওই ঘাঁটি দু’টিতে প্রায় ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানি বাহিনী।

ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৮০ জন মার্কিন সেনা নিহত এবং আরও ২০০ জন আহত হয়েছেন বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে দাবি করা হয়েছে। তবে তা অস্বীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

দুই দেশের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে।

মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার দিকে থেকে সবচেয়ে এগিয়ে ইরান। তবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিহত করতে তা পর্যাপ্ত কিনা এনিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে। চলুন জেনে নেয়া যাক ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ও সেগুলোর দূরত্ব পাড়ি দেয়ার ক্ষমতা সম্পর্কে।

খলিজ ফার্স মিসাইল

শব্দের গতির চেয়েও দ্রুতগতির অর্থাৎ সুপার সনিক ক্ষেপণাস্ত্র এটি। এটিকে যুদ্ধজাহাজ ও স্থলভাগ থেকে চালানো যায়। এ মিসাইলটিকে ইরান স্মার্ট মিসাইল হিসেবে গণ্য করে।

ইরানের বিপ্লবী বাহিনীর উপপ্রধান মোহাম্মদ সালেহ জোকার এ মিসাইলটি সম্পর্কে জানিয়েছেন, খলিজ ফার্স মিসাইলটি ৩ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

অর্থাৎ, ইসরায়েল, চীন, রাশিয়া, ভারত, মিশর, তুরস্ক সহ আরো অনেক দেশ এই শক্তিশালী মিসাইলের আওতার মধ্যে রয়েছে।

এটির গড় ওজন ৬৫০ কিলোগ্রাম। দূরবর্তী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো প্রযুক্তি দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে।

সাহাব মিসাইল

ইরানের বিখ্যাত ক্ষেপণাস্ত্র সাহাব মিসাইল। মোট ৬টি শাহাব মিসাইল রয়েছে ইরানের কাছে। রাশিয়ার ‘এস এস-১’ ক্ষেপণাস্ত্রের আদলে তৈরি করা হয়েছে এগুলো।

সাহাব-১ মিসাইল আঘাত করতে পারে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে। সাহাব-২ এর আঘাত করার পরিসীমা ৫০০ কিলোমিটার।

সাহাব-৩ মিসাইলটি ২ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সাহাব-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত শত্রুদের ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সাহাব সিরিজের মধ্যে শাহাব-৫ ক্ষেপণাস্ত্রটির ব্যাপারে ইসরায়েলি মিডিয়াগুলো জানিয়েছে, ইরানের কাছে থাকা মিসাইলগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী।

ফাতেহ-১১০

ইরানের হাতে থাকা ব্যালিস্টিক মিসাইলগুলোর মধ্যে ফাতেহ-১১০ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিরও কয়েকটি সিরিজ রয়েছে। এটি ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সমুদ্র থেকে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রে এটি অনায়াসেই ব্যবহার করা যায়। ফাতেহ-৩১৩, জুলফিকার-৭০০, হরমুজ-১ এবং হরমুজ-২ সবই শক্রঘাঁটিতে ভালোভাবে আঘাত হানতে পারে।

কদর-১১০

ইরানের কদর ১১০ মিসাইলটি ইউরোপের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইরানের দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র ‍হিসেবে এটি অন্যতম।

এ মিসাইলটি শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে অনায়েসে ঢুকে যেতে পারে। শত্রুদের রাডার অনেক ক্ষেত্রে এটিকে ধরতে সক্ষম হবে না বলে দাবি ইরানের।

ইউরোপীয় সীমানা পর্যন্ত কদর-১১০ মিসাইল দিয়ে আঘাত হানা যাবে। তাই এটিকে ইউরোপের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

কিয়াম-১

ইরানের অন্যতম শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র কিয়াম-১। ৭৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভূল আঘাত হানতে সক্ষম এই মিসাইলটি।

জোলফাগার

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে আরো একটি কার্যকরী ক্ষেপণাস্ত্র জোলফাগার। ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য এই মিসাইলটি ৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও সফলভাবে আঘাত হানতে পারে।

ইরান থেকে তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ইসরায়েলের দূরত্ব ১৭০০ কিলোমিটারের মতো। সে হিসাবে বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েলের গোটা এলাকা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আওতার মধ্যেই রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তান, কাতার, বাহরাইন, কুয়েত, ইরাক, মিসর, তুরস্ক এবং ইউরোপের রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও গ্রিসের মতো দেশ। এ দেশগুলোর মধ্যে মিসর ছাড়া সব দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি বা উপস্থিতি রয়েছে।

এ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নির্মাণ ও পরিচালনার ভার কেবল ইরানের বিপ্লবী গার্ডের হাতে। এই অভিজাত বাহিনী জবাবদিহি করে কেবল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে।

মার্কিন গোয়েন্দারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসর ২০০০ কিলোমিটার বললেও তেহরান হুমকি দিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার জবাব দেয় তবে সরাসরি মার্কিন ভূখণ্ডে হামলা চালানো হবে।

সূত্র: বিবিসি, মিডল ইস্ট মনিটর

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: