
সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে ভারতকে পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দেওয়ায় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে তুলনা করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল রুবিন। পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি।
গতকাল সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে সাক্ষাৎকার দেন মাইকেল রুবিন। সেখানে তিনি বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী এবং তিনি সবকিছু ব্যবসায়িক দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত। যে কোনো বাজে শান্তি চুক্তি যে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দিকে নিয়ে যে পারে— তা তিনি বোঝেন না। তার মনে নোবেল পুরষ্কারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা জন্মেছে।”
“মার্কিনীরা সবসময় সন্ত্রাসবাদকে অস্পষ্টভাবে দেখে। অসীম মুনির হলেন একজন স্যুট পরিহিত ওসামা বিন লাদেন এবং এমন কোনো ছাড় তাকে দেওয়া হবে না, যা তাকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কিংবা দেশটির অভিজাতদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ দেবে। অতি সম্প্রতি তিনি অর্ধেক বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে ধ্বংসের যে হুমকি দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে রাষ্ট্র হিসেবে বৈধতার অধিকার পাকিস্তান হারিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের উচিত পাকিস্তানে প্রবেশ করে তার পরমাণু অস্ত্রগুলো সুরক্ষিত করা। এখনই সময়, কারণ দেরি হলে হয়তো আমাদের চড়া মাশুল গুনতে হবে।”
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে জুনের প্রথম সপ্তাহে সংঘাত শুরু হয় দক্ষিণ এশিয়ার দুই বৈরী প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। পাঁচ দিন সংঘাতের পর ৯ জুন ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে যুদ্ধবিরতিতে যায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী দুই দেশ।
সংঘাত থামার পর ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন যে, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্ভাব্য পরমাণু যুদ্ধ থামিয়ে দিয়েছেন তিনি এবং পাকিস্তানও তার দাবিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের দাবিকে সমর্থন করেনি। উপরন্তু সম্প্রতি ভারতের পার্লামেন্ট লোকসভার অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, কোনো বিদেশি নেতা এ যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন না।
তারপর থেকে ভারতের প্রতি ক্ষুব্ধ ট্রাম্প পাকিস্তানের প্রতি ঘনিষ্ঠতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত জুলাই মাসে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ও বর্তমানে দেশটির সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে হোয়াইট হাউজে নিমন্ত্রণ করেন ট্রাম্প, সেখানে তার সঙ্গে বৈঠক ও মধ্যাহ্নভোজ করেন তিনি।
কয়েক দিন আগে ফের যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছেন অসীম মুনির। সেখানে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের টাম্পা শহরে রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, যদি পাকিস্তানের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে তাহলে (পরমাণু অস্ত্র হামলার মাধ্যমে) অর্ধেক বিশ্ব ধসিয়ে দেবে দেশটির সেনাবাহিনী।
“আমরা পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি আমরা মনে করি যে আমরা ধ্বংস হচ্ছি, তাহলে আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেককে ধসিয়ে নিয়ে যাব”, অনুষ্ঠানে বলেছেন ফিল্ড মার্শাল মুনির।
তার এই বক্তব্যের সমালোচনা করে সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের সাম্প্রতিক মন্তব্যে এটা আরও একবার স্পষ্ট হলো যে পাকিস্তান একটি দায়িত্বহীন পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ রাষ্ট্র। পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হতে হলে যে দায়িত্বশীলতা একটি রাষ্ট্রের থাকতে হয়— পাকিস্তানের তা নেই।”
“তার বক্তব্যে আরও একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়েছে এবং তা হলো, যখনই যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্রয় দেয়— তখনই তারা নিজেদের প্রকৃত রং বা চেহারা দেখানো আরম্ভ করে।”
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট