মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২

হঠাৎ শরীর ফুলে যাচ্ছে? হতে পারে ভেতরে লুকানো বড় কোনো সমস্যা

হঠাৎ শরীর ফুলে যাচ্ছে? হতে পারে ভেতরে লুকানো বড় কোনো সমস্যা

সংগৃহীত

হঠাৎ করে দেখলেন শরীরটা ফুলে ঢোল হয়ে গেছে—হাত, পা বা পেট যেন ভারী হয়ে আছে? অনেকে একে বলেন “পানি এসেছে”। আসলে শরীরে পানি জমলেই এমন ফোলাভাব হয়। এটা একটা সাধারণ সমস্যা মনে হলেও, অনেক সময় এর পেছনে থাকতে পারে বড় কোনো শারীরিক সমস্যা।

এই কারণে বিষয়টিকে অবহেলা করা একদমই ঠিক না। চলুন জেনে নিই—কেন শরীরে পানি জমে, এবং কবে এটা চিন্তার কারণ হতে পারে।

১. হৃদযন্ত্রে সমস্যা হলে

হার্ট ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। তখন শরীরে পানি জমতে শুরু করে—বিশেষ করে পা, পেট বা ফুসফুসে।

লক্ষণ

বুক ধড়ফড় করা

শ্বাসকষ্ট

বুকে ব্যথা

ক্লান্তি

উচ্চ রক্তচাপ

২. লিভারের সমস্যায় (যেমন সিরোসিস)

লিভার সিরোসিস হলে প্রথমে পেটে পানি জমে, পরে তা পা ও বুকেও ছড়িয়ে পড়ে। এর মূল কারণ হতে পারে:

হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস

অতিরিক্ত মদপান

লিভারে চর্বি জমা

লক্ষণ

খাবারে অরুচি

হলুদ প্রস্রাব

রক্ত বমি

শরীর দুর্বল লাগা

৩. কিডনির অসুখ হলে

কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীরে জমে থাকা তরল বের হতে পারে না। এতে মুখ, পা, বুক ফুলে যায়।

লক্ষণ

কম প্রস্রাব

প্রস্রাব ঘন বা ফেনা ফেনা

বমি বমি ভাব

খাবারে অরুচি

৪. রক্তে আমিষ (প্রোটিন) কমে গেলে

আমিষ আমাদের শরীরের জন্য খুব দরকারি। রক্তে এর পরিমাণ কমে গেলে শরীরে পানি জমে যেতে পারে।

কারণ

সঠিক খাবার না খাওয়া

হজমের সমস্যা

কিডনির মাধ্যমে অতিরিক্ত প্রোটিন বেরিয়ে যাওয়া

ফলে: পা, পেট ও বুকে পানি জমে।

৫. থাইরয়েড হরমোন কমে গেলে

থাইরয়েড হরমোন শরীরের অনেক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এই হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে শরীর ফুলে যেতে পারে।

লক্ষণ

গলা বড় হয়ে যাওয়া (গলগণ্ড)

শীত শীত লাগা

ওজন বেড়ে যাওয়া

কোষ্ঠকাঠিন্য

মেয়েদের ক্ষেত্রে মাসিক বেশি হওয়া

৬. কিছু ওষুধ থেকেও পা ফুলে যেতে পারে

কিছু ব্যথার ওষুধ এবং উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পায়ে পানি আসতে পারে।

যেমন:

ব্যথার ওষুধ: ডাইক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন, ইটোরিকক্সিব

প্রেসারের ওষুধ: অ্যামলোডিপিন, নিফেডিপিন (ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার)

কী করবেন?

শরীরে পানি জমা মানেই ভয়ের কিছু নয়, তবে বসে থাকাও ঠিক নয়। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডাক্তার প্রয়োজনমতো কিছু পরীক্ষা দিতে পারেন, যেমন:

রক্তের সাধারণ পরীক্ষা (CBC)

প্রস্রাব পরীক্ষা

বুকের এক্সরে, ইসিজি

ইউএসজি, হার্টের ইকো

হরমোন টেস্ট

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: রোগের মূল কারণ খুঁজে বের করে চিকিৎসা শুরু করা।

শরীরে পানি জমা মানে শুধু একটা ফোলাভাব না — অনেক সময় শরীর ভেতর থেকে সাহায্যের সংকেত পাঠাচ্ছে। তাই সময়মতো গুরুত্ব দিন, চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিন, আর নিজের শরীরকে বুঝে চলুন।

স্বাস্থ্যই সম্পদ — একে হেলাফেলা নয়, যত্ন নিন।

সূত্র: ঢাকা পোষ্ট

সর্বশেষ:

শিরোনাম: