সোমবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

জুলাইয়ে বড় প্রবৃদ্ধির পর আগস্টে কমল পণ্য রপ্তানি

জুলাইয়ে বড় প্রবৃদ্ধির পর আগস্টে কমল পণ্য রপ্তানি

সংগৃহীত

পণ্য রপ্তানিতে জুলাই মাসে বড় প্রবৃদ্ধি আগস্ট মাসে আর ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। গত মাসে রপ্তানি কমে গেছে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি। তারপরও বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ৪ বিলিয়ন বা ৪০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ৪৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তখন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। পরের মাস অর্থাৎ আগস্ট মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলার। এই রপ্তানি গত বছরের আগস্টে রপ্তানি হওয়া ৪০৭ কোটি ডলারের তুলনায় ৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম।

কাস্টমসের শুল্কায়নের পর পণ্য রপ্তানি হয়। রপ্তানি পণ্যের সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরই এনবিআরের তথ্যভান্ডারে নথিভুক্ত হয়। স্থানীয় রপ্তানি (দেশের অভ্যন্তরে রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানে অন্য প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও সরঞ্জাম সরবরাহ), নমুনা রপ্তানি ও প্রকৃত রপ্তানি—এই তিন ধরনের হিসাব থাকে এনবিআরের তথ্যভান্ডারে। রপ্তানি হওয়া পণ্য থেকে কত আয় দেশে আসে, তার হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া যায়।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তুলনামূলক কম পণ্য রপ্তানি হয়। গত এপ্রিল থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে একধরনের অস্থিরতা ছিল। গত ৩১ জুলাই বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাল্টা শুল্ক এড়াতে জুলাই মাসে অনেক পণ্য জাহাজীকরণ হয়েছে। স্থগিত থাকা অনেক পণ্যও রপ্তানি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জুলাই মাসে অনেক রপ্তানি হয়েছে, যদিও শেষ পর্যন্ত ৭ আগস্ট পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কোন পণ্য কোন দেশে কী পরিমাণ রপ্তানি হয়, তার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এনবিআর থেকে পরিসংখ্যান নিয়ে এটা করে থাকে সংস্থাটি। তবে সেটি এখনো প্রকাশ করেনি ইপিবি। সে জন্য আগস্টে কোন পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে, কোন পণ্যের কমেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৮২৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের জন্য শুল্ক ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ।

প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পাল্টা শুল্ক কাছাকাছি হওয়ায় দুশ্চিন্তামুক্ত হন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। একই সঙ্গে চীনের পণ্যে ৩০ ও ভারতে মোট ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই বাড়তি ক্রয়াদেশ পেতে শুরু করেছে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, পাল্টা শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার আলোচনা চলমান থাকায় গত কয়েক মাস ক্রয়াদেশ আসার হার ছিল কম। এ ছাড়া জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সাধারণত তৈরি পোশাক রপ্তানি কম হয়। এ পরিস্থিতিতে আগস্ট মাসে রপ্তানি কম হওয়া স্বাভাবিক। ক্রয়াদেশ নিয়ে কারখানার সঙ্গে দর-কষাকষি করছে মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। সামনের মাসগুলোয় রপ্তানি বাড়বে বলে তাঁর প্রত্যাশা।

সূত্র: প্রথম আলো