শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় যমুনার চরে বৃক্ষরোপণ

বগুড়ায় যমুনার চরে বৃক্ষরোপণ

সব কাজেরই একটা মৌসুম বা সময় থাকে। তেমনি বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময় আছে। মূলত বর্ষাকালই বৃক্ষরোপণের মোক্ষম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সুহৃদ সমাবেশ বগুড়ার উদ্যোগেও প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে শহর কিংবা গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সড়ক অথবা উন্মুক্ত স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করা হয়ে থাকে।  

 তবে কভিড-১৯ বা করোনা মহামারিরূপে আবির্ভূত হওয়ায় ২০২০ সালে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। গত বছর বর্ষাকালে মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট তুলনায় এবারের বর্ষা মৌসুমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি থাকায় চলতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করা যায় কিনা, তা নিয়ে আমরা সুহৃদরা খানিকটা দ্বিধায় ছিলাম। অবশ্য বর্ষার পরপরই শরতের শুরুতে সারাদেশের মতো বগুড়ায়ও করোনার সংক্রমণ যখন কমতে থাকে, তখনই আমরা বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। গাছগুলো যাতে সুরক্ষিত অবস্থায় সযত্নে বড় হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য প্রথমেই আমরা সেই উপযোগী স্থান বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এ জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় সুহৃদ সমাবেশ বগুড়ার উপদেষ্টা আসাদুল হক কাজল এবং সাধারণ সম্পাদক অরূপ রতন শীলকে। একই সঙ্গে ফলদ ও বনজ জাতের গাছের ভালো মানের চারা সংগ্রহের কাজটিও তাদের সম্পন্ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। 

দায়িত্ব পেয়েই আমাদের উপদেষ্টা আসাদুল হক কাজল এবং সাধারণ সম্পাদক অরূপ রতন শীল ছুটির দিন শুক্রবার করে বগুড়া শহরতলির বিভিন্ন স্থান এবং কয়েকটি উপজেলা এলাকায় সরেজমিন ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। এরই ফাঁকে তারা বিভিন্ন নার্সারিতে ভালো মানের চারা খোঁজার কাজও চালিয়ে যেতে থাকেন। বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের পর সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অদূরে বড়ইকান্দি বছির কাজী (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয় এবং দুর্গম চরাঞ্চলে শোনপচা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তার পাশে চর শোনপচা জামে মসজিদের সামনে বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত স্থানের সন্ধান পাওয়া যায়।

৮ অক্টোবর শুক্রবার গাছের চারা সংগ্রহ এবং নির্ধারিত স্থানগুলোতে তা রোপণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার এলাকার একটি নার্সারি থেকে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লেবু, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা, বড়ই, লম্বু, বট ও কড়ই- এই ১১ ধরনের তিন শতাধিক চারা সংগ্রহ করা হয়।
 

চারাগুলো নিয়ে ৮ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে আমরা বগুড়া শহরের জিরোপয়েন্ট সাতমাথা থেকে ভাড়া করা একটি যাত্রীবাহী মিনিবাস নিয়ে সারিয়াকান্দির উদ্দেশে রওনা হই। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আমরা সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের বড়ইকান্দি বছির কাজী (বিকে) উচ্চ বিদ্যালয়ে পৌঁছাই। সেখানে রোপণের জন্য মিনিবাসের ছাদ থেকে ওই ১১ জাতের ৪০টি গাছ নামানো হয়। এরপর ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মাহবুল আলম রঞ্জু এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের সহায়তায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মাঠের দক্ষিণ ও পশ্চিম ধারে বাছাই করা গাছের চারাগুলো রোপণ করা হয়। এ সময় সুহৃদ সমাবেশ বগুড়ার সভাপতি রাজেদুর রহমান রাজু, সাধারণ সম্পাদক অরূপ রতন শীল, উপদেষ্টা আসাদুল হক কাজল, সাবেক সভাপতি মুন্সি তারিকুল আলম ডলারসহ সুহদ সমাবেশ বগুড়ার অর্ধশত সদস্য, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের বগুড়া প্রতিনিধি ফরহাদুজ্জামান শাহী এবং বগুড়া ব্যুরোপ্রধান মোহন আখন্দ ও স্টাফ রিপোর্টার এস এম কাওসার উপস্থিত ছিলেন। এরপর জুমার নামাজ এবং দুপুরের খাবার বিরতির পর দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে কর্ণিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মাহবুল আলম রঞ্জুর বাড়িতে আমরা সারিয়াকান্দির স্থানীয় সাংবাদিক এবং বছির কাজী উচ্চ বিদ্যালয়, শোনপচা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চর শোনপচা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিচিত পর্বে মিলিত হই। সভাটি সঞ্চালনা করেন বগুড়া ব্যুরোপ্রধান মোহন আখন্দ। সভায় কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মাহবুল আলম রঞ্জুসহ উপস্থিত সাংবাদিক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দুর্গম চরাঞ্চলকে বৃক্ষরোপণের স্থান হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য সুহৃদ সমাবেশ বগুড়ার নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। তারা গাছগুলোর বিশেষ যত্ন নেওয়ারও অঙ্গীকার করেন। 

পরিচিতি সভা শেষে আমরা অর্ধশত সুহৃদ ২১০টি গাছ নিয়ে মথুরাপাড়া ঘাট থেকে একটি বড় নৌকায় চড়ে দুর্গম শোনপচা চরাঞ্চলের উদ্দেশে রওনা হই। তবে চরাঞ্চলের নৌকার ঘাট থেকে শোনপচা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও চর শোনপচা জামে মসজিদ কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে থাকা শোনপচা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলামের হাতে রোপণের জন্য ১৭০টি গাছ এবং চর শোনপচা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি এমদাদুলের কাছে বাকিকে ৪০টি গাছ রোপণ করার জন্য তুলে দেওয়া হয়। গাছ বিতরণ ও রোপণ শেষে ফেরার পথে মাঝে একটি দুর্গম চরে নেমে সুহৃদ সদস্যরা আনন্দময় সময় কাটান। পরে সেখান থেকে নৌকা নিয়ে মথুরাপাড়া ঘাটে যখন ফেরা হয়, তখন সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামছিল। সেখানে চা পানের বিরতি দিয়ে বৃক্ষরোপণ অভিযান শেষ করে আমরা বগুড়া শহরে ফিরে আসি।

দৈনিক বগুড়া