শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার শিবগঞ্জে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক

বগুড়ার শিবগঞ্জে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক

উত্তর জনপদের উপজেলা বগুড়ার শিবগঞ্জে আগাম ধান ঘরে তুলতে না তুলতেই আগাম আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তবে গত মৌসুমে আলুর দামে কিছুটা বিপাকে কৃষক। হিমাগারে আলু রেখে অর্ধেক দামও ফেরত পাননি কৃষকেরা। তবু লাভের আশায় এবারও শিবগঞ্জ, উপজেলায় আগাম আলু চাষের ধুম পড়েছে। কৃষক ভালো দাম না পেলেও এবার আঠার হাজার পাঁচশত মেঃটন বেশি আলু উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

চলতি মৌসুমে আগাম আলু লাগাতে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৮ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। সে হিসাবে উৎপাদন হবে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার মেঃটন। আগাম আলু ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যেই বাজারে চলে আসবে। এবার ভারিবৃষ্টির কারণে আগাম আলুর বীজ রোপণে কিছুটা দেরি হলেও গতবারের চেয়ে এবার বেশি জমিতে আলু চাষ হবে।

গত মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছিলেন উপজেলার উথলী গ্রামের আলিম উদ্দিন। খরচ বাদে তাঁর লক্ষাধিক টাকা লাভ হয়েছিল মৌসুমের শুরুর দিকে বাজার চাঙা থাকায় খেতের আলু বিক্রি করেন তিনি । কিন্তু এবার বাজার মন্দা পুরোনো আলুর । অনেক কৃষক হিমাগারে আলু রেখে লোকসানে পড়েছেন। তবু এ উপজেলায় আগাম আলুর চাষে ঝুঁকেছেন আলিম উদ্দিনের মতো আরও অনেক কৃষক । আলিম উদ্দিন একাই তিন বিঘা জমিতে আগাম আলু চাষ করেছেন।

সম্প্রতি উপজেলার কানুপুর, বনতেঘরী, উথলি, সন্ন্যাসী ধোন্দাকোলা, নারায়ণপুর, এনায়েতপুর, গুজিয়া, উত্তর শ্যামপুর, মাঝপাড়া, রায়নগর, অনন্তবালাসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে আগাম আলু চাষে কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা গেছে। খেত থেকে আগাম জাতের আমন ধান ছাড়াও শীতকালীন সবজি তুলে সেখানে আলু লাগানোর জন্য জমি তৈরি, সার ছিটাচ্ছেন কৃষকেরা। দেশি পাকরি, গ্রানুলা, কার্ডিলালসহ নানা জাতের আলু রোপণ করা হচ্ছে জমিতে।

উপজেলার গুজিয়া এলাকার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘গতবারত দুই বিঘা জমিত আগুর আলু গারিছুনু। বাম্পার ফলন, লাভও ভালো হচে। কিন্তু এবার হিমাগারত রাখা আলু কেউ খাচ্চে না। জমিত আলু ল্যাগে লোকসানোত পরছি হামরা, তারপরও ঝুঁকি লিয়ে খ্যাতত আগুর আলু লাগাচ্চি।’ গত মৌসুমে আগাম আলুর দাম ছিল প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি কেজির দাম ছিল ১৮ টাকা। অনেক কৃষক এই আলু তখন বিক্রি না করে হিমাগারে রেখেছিলেন। পরে সে আলু কৃষকেরা প্রতি কেজি বিক্রি করেন ১১ টাকায়।

কানুপুর গ্রামের কৃষক জয়লাল বলেন, শিবগঞ্জের মাটি আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ ছাড়া আগাম আলুর চাষও খুব লাভজনক। এ কারণে হিমাগারে রেখে লোকসান হলেও তিনিসহ পরিচিত কৃষকেরা আগাম আলুর চাষ করছেন।

ওই এলাকার কৃষক আকরাম হোসেন বলেন, এক বিঘায় ২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। জমিতেই যদি ভালো দামে আলু বিক্রি করা যায়, তাহলে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ আসতে পারে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে, তাই ভালো ফলনের আশা তাঁর। বিঘাপ্রতি ৩০-৩৫ মণ আলু উৎপাদন হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

আগাম জাতের আলু চাষে মাঠে কাজ পেয়ে জয়নাল, ধলু মিয়া, আকামুদ্দিন এর মতো অনেক শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটেছে। তাঁরা প্রতিদিন ৩৫০ টাকা হাজিরায় কাজ করছেন। এই কাজে নারী শ্রমিকেরাও শ্রম দিচ্ছেন। কাজের ফলে আশ্বিন-কার্তিকের অভাব তাঁরা বুঝতে পারছেন না।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মুজাহিদ সরকার বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলা আলু চাষে দেশের অনেক এলাকা থেকে এগিয়ে। উপজেলার আলু দেশের সিমানা পেরিয়ে এখন বিদেশেও পাঠানো হচ্ছে। কৃষকেরা বেশ ভালো দামে আলু বিক্রি করতে পারেন। আশা রাখি এই আগাম আলুর মূল্যটাও কৃষক ভালো পাবে। আবহাওয়া ভালো আছে, এই আবহাওয়াতে আলু ভালো ফলন হবে।

দৈনিক বগুড়া