শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর কোলঘেঁষে বউ মেলা

বগুড়ার শেরপুরে করতোয়া নদীর কোলঘেঁষে বউ মেলা

স্বামী ও দুই ছেলে নিয়ে নার্গিস বেগমের সংসার। ছেলেদের মধ্যে সবেমাত্র স্কুলে যেতে শুরু করেছে নিশাত। আরেক ছেলে নিরবের এখনও স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি। তবে দু’জনই মেলায় যাওয়ার বায়না ধরে বসে। বলেও বসে, ‘মা আমাদের তো মেলার যাওয়ার বয়স হয়েছে। গ্রামের অনেক  ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে তাদের মায়ের সঙ্গে মেলায় যাচ্ছে। তুমিও আমাদের  মেলায় নিয়ে চলো না মা। তখন মার আর কিইবা করার থাকে।

বায়না পুরণে  ছেলেদের নিয়ে মেলায় যান নার্গিস বেগম। আর এই মেলাটির নাম বউ মেলা। প্রত্যেক বছর চৈত্রের বারুণী তিথিতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের গাড়ীদহ গ্রামে করতোয়া নদীর পশ্চিম কোলঘেঁষে বসে এই বউ মেলা। শনিবার (২৬মার্চ) দিনব্যাপী চলে এই মেলা।হিন্দু শাস্ত্রমতে, বারুণী তিথিতে এককালের প্রমত্তাখ্যাত করতোয়া নদীতে স্নানোৎসব করা হতো। এ তিথিতে এখানে স্নান করলে অতীত জীবনের সব পাপ মোচন করে দেন ইশ্বর। ইশ্বরের অপার কৃপা লাভ করা যায়। গাড়ীদহ নদীর মাঝ দিয়ে বহমান করতোয়া নদীতে চলে এই স্নানোৎসব। যদিও যুগ যুগ ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে ঘিরে মেলাটি হয়ে আসছে।

সেই থেকে এ মেলায় হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি মুসলিম স¤প্রদায়ের মানুষও সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন। মেলা ঘিরে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। স্বজনদের পদভারে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম ও আশেপাশের এলাকা। প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল গফুর, আব্দুর রহমান ও জিল্লুর রহমান জানান, কবে থেকে এখানে স্নানোৎসব ও মেলা হয়ে আসছে তা সঠিক করে বলা মুশকিল। তবে অনুষ্ঠানটি যে শতবর্ষী তা ধারণা করা হয়। আর এখানে কয়েক যুগ ধরে বউ মেলা হয়ে আসছে বলেও জানান এসব প্রবীণ ব্যক্তিরা।মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইদুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক বছর বারুণীর তিথির দ্বিতীয়দিনে এখানে বউ মেলার আয়োজন করা হয়।

এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলায় এসে বিভিন্ন বয়সী নারীরা নানা ধরনের জিনিসপত্র কিনে থাকেন। তিনি আরও জানান, মেলায় নারীর পাশাপাশি পুরুষ বিক্রেতা রয়েছেন। একইভাবে অনেক নারী তাদের স্বামী বা অভিভাবকদের নিয়ে মেলায় আসেন। এ কারণে বউ মেলা হলেও নারীদের পাশাপাশি অনেক পুরুষ মানুষকেও এ মেলাতে দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল মাঠজুড়ে মেলা বসে। মেলায় স্থান পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের দোকান। সেইসঙ্গে চলছে নাগরদোলা খেলা। নারীরা দলবেঁধে আবার এলোমেলোভাবে দোকানে দোকানে ঘুরছেন। জিনিসপত্র পছন্দ করছেন। দরদাম করে পছন্দের জিনিসটি কিনছেন। আবার অনেকেই ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নানা ধরনের ভাজিপুরি দোকানে যান। সন্তানদের আবদার পুরনে সেগুলো দোকানে বসে বা পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে খেতেও দেখা যায়।  

ক্ষিতিশ চন্দ্র তার স্ত্রী শম্পা, বোন হিরা, ছেলে আকাশ ও মেয়ে নুপুরকে নিয়ে বউ মেলায় এসেছেন। তিনি জানান, মেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের খেলনা, কসমেটিকস, হাত পাখা, কাঠের সামগ্রী, মিষ্টান্ন সামগ্রী কিনেছেন। ছেলে-মেয়েরা নাগরদোলায় চড়ে ওরা ব্যাপক আনন্দ করেছে। মুন্নি, সালমা, মর্জিনাসহ একাধিক নারী জানান, বাড়ির কাছে মেলা হওয়ায় সকালে একদফা এসেছি। দুপুরের খাওয়া সেরে বিকেলে আরেকদফা মেলায় এসেছি। অনেক কিছু খেয়েছি। মেলা থেকে কিছু সাংসারিক জিনিসপত্র কেনা হয়েছে। পাশাপাশি সন্তানদের জন্য নানা ধরনের খেলনা সামগ্রী কিনেছি। বাদ যায়নি মিষ্টান্ন সামগ্রী কেনা। বউ মেলাটি তাদেরকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছে বলেও যোগ করেন এসব নারীরা।

দৈনিক বগুড়া