শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সারিয়াকান্দির তিন পরিবারের চুনের বেচাকেনা পাঁচ লাখ টাকা

সারিয়াকান্দির তিন পরিবারের চুনের বেচাকেনা পাঁচ লাখ টাকা

ঝিনুক থেকে চুন তৈরির বিদ্যাটা বংশপরম্পরায় করে আসছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি অন্তার পাড়ার কারিগররা। সেখানকার চুন কারিগরদের মধ্যে এখন দেখা মিলে মোটে তিন পরিবার। তাও আগের জায়গায় নয়। তাদের নতুন আবাস পৌরসভার কলোনী পাড়ায়। টিকে থাকা এই কারিগরদের দাবি, তিন পরিবার থেকে বছরে অন্তত পাঁচ লাখ টাকার চুন বেচাকেনা হয়। 

চুনের কারিগরদের কাছে থেকে জানা যায়, প্রায় ৩০ বছর আগে সারিয়াকান্দির অন্তার পাড়ায় ছিল ২৫ টি পরিবার। সে সময় পাড়ায় চুন তৈরি কাজে দিনরাত রমরমা ভাব লেগে থাকতো। এখানকার তৈরী চুন চলে যেত দেশের বিভিন্ন জেলায়। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে সেই সুখ স্থায়ী হয়নি। অন্তার পাড়া গ্রামটি বিলীন হওয়ার পর ওই পরিবারগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যান বিভিন্ন অঞ্চলে।

তাদের মধ্যে তিন পরিবার ঠাঁই নেয় সারিয়াকন্দি পৌর এলাকার কলোনি পাড়া। এখানে আবাস গেড়ে শুরু করেন বাপ-দাদার আদি পেশা। এই তিন পরিবারের কর্তারা হলেন সুদেপ দেবনাথ (৬২), নিরঞ্জন দেবনাথ (৩৫) ও লিটন দেবনাথ।

তারা জানান, অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা নানা কাজে যুক্ত এখন। তবে বর্তমানে কলোনী পাড়ার তিন পরিবার আদি ব্যবসাটি ধরে রেখেছেন। বর্তমানে প্রতি বাড়িতে দৈনিক ১ থেকে দেড় মণ চুন তৈরি হয়। এ হিসাবে মাসে প্রতি পরিবারের আয় হয় ১৪ হাজার টাকা। এ হিসেবে তাদের একেক জন বছরে ব্যবসা করে থাকেন ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। উপজেলায় এই তিন কারিগরের হাত ধরে বছরে অন্তত ৫ লাখ টাকার চুন বেচাকেনা হয়ে থাকে।  

চুন তৈরির বিষয়ে কারিগররা জানান, স্থানীয় নদী থেকে চাছা ঝিনুক সংগ্রহ করতে হয়। নিজেরা সংগ্রহ করতে না পারলে ২০০ টাকায় ৫০ কেজি ঝিনুক ক্রয় করেন। ঘরে ছোট শ্যালো মেশিন বসিয়ে গোলকার আকৃতির হলারের মধ্যে চাছা ঝিনুক দিয়ে গুড়ো করে তৈরী করা হয় এই মিহি চুন। ৫০ কেজি ঝিনুক থেকে প্রায় ৪ মণ চুন তৈরি সম্ভব বলে জানান তারা।  

কারিগরদের একজন সুদেব দেবনাথ বলেন, চুন তৈরিতে আমাদের লাভ কম। শ্যালো মেশিনের খরচ ছাড়াও অনান্য খরচ তো আছেই। খাটুনি হিসেবে লাভ তেমন একটা থাকে না আমদের। এজন্য অনেকেই এ পেষা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেষায় যুক্ত হয়েছেন। 

সুদেব আরও বলেন, এটা আমাদের কাছে শিল্প। পান খানেওয়ালাদের কাছে খুবই প্রিয়। যার জন্য এখনও রয়েছে বাজারে এই চুনের চাহিদা। এই চুন তৈরি থেকে বিক্রি আমরা নিজেরাই করে থাকি। বাজারে স্থানীয়রা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে চুন ক্রয় করে ব্যবসায়ীরা। তবে আফসোস এ পেশায় কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না কারো কাছ থেকে। 

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, এ ধরনের চুন তৈরি করে থাকেন তা আমার জানা আছে। তবে তারা যোগাযোগ করলে আমরা তাদের ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের আওতায় সহযোগিতা করতে পারব।  

দৈনিক বগুড়া