শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কাহালুতে প্রধান শিক্ষকের বেতনে ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও বোর্ড ফি

কাহালুতে প্রধান শিক্ষকের বেতনে ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও বোর্ড ফি

বগুড়ার কাহালু উপজেলার বাখরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আলম নিজ বেতনের টাকায় শিক্ষার্থীদের স্কুল ড্রেস ও এস এস সি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের বোর্ড ফি দেন।

জানা গেছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি নিজের অর্থে শিক্ষার্থীর স্কুল ড্রেস ও বোর্ড ফি দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সুবিধাভোগী কয়েকজন শিক্ষার্থী এই তথ্য জানায়। তাদের তথ্যমতে ৯০ এর দশকে শিক্ষায় বাখরা, বেলঘরিয়া, পগইল, ইসবপুর, শীতলাই এলাকার মেয়েরা অনেকটা পিছিয়ে ছিলো।

তখন নারীদেরকে শিক্ষাদিক্ষায় এগিয়ে নিতে শাহিনুর আলম স্থানীয় শিক্ষিত মানুষদের সহযোগিতায় ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বাখরা বালিকা বিদ্যালয়। ২০০১ সালে নি¤œমাধ্যমিক পর্যন্ত বিদ্যালয়টি একাডেমিক স্বীকৃতি পায় এবং ২০০২ সালে এমপিও ভুক্ত হয়। ওই বছরই আবার মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয় এই বিদ্যালয়ে। অনেক দেরীতে হলেও ২০১৮ সালে মাধ্যমিক পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত হয় এই বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শাহিনুর আলম এখানে নিষ্ঠার সাথে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নানা প্রতিকুলতার মধ্যেও তিল তিল করে তিনি এই বিদ্যালয়কে একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিনত করেছেন। যারফলে পরীক্ষায় এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরবরই ভালো রেজাল্ট করে আসছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ছাত্রী সংখ্যা ৩১৭ জন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানালেন, হেড স্যার নিজের পরিবারের পরেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসেন। তিনি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ষষ্ঠ শ্রেণিতে যারা ভর্তি হয় তাদের সকলকে নিজের অর্থে শাহিনুর আলম স্কুল ড্রেস দেন। এদিকে এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় বেশীরভাগ ছাত্রীরই বোর্ড ফি শাহিনুর আলম দিয়ে থাকেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া খাতুন, সিরাতুন আক্তার, জাহিমা খাতুন, মারিয়া আক্তার, মনিকা আক্তারসহ অনেকে জানায়, হেড স্যার নিজের বেতনের টাকা দিয়ে আমাদেরকে জুতাসহ পুরো স্কুল ডেস দিয়ে থাকেন। যারা অর্থের অভাবে এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে পারেনা তাদের টাকাও হেড স্যার দেন। স্যার আমাদের সবাইকে নিজের সন্তানের মতই ভালোবাসেন।

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর তথ্যমতে গত বছর এই বিদ্যালয়ের ৩৩ জন এস এস সি পরীক্ষায় দিয়েছে। এই ৩৩ জনের মধ্যে কেউফরম ফিলাপের টাকা দিয়েছে আবার কেউ টাকা দেয়নি। গত বছরে ফরম ফিলাপের মোট ২৩ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। বোর্ড ফি ও কেন্দ্র ফি মিলে খরচ হয়েছে ৫৬ হাজার ৮৫০ টাকা। গত বছর হেড স্যার তাঁর নিজস্ব অর্থ ভুতর্কি দিয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৫০ টাকা। অফিস সহকারীর মতে প্রতি বছরই এস এস সি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ বাবদ হেড স্যার অনেক টাকা নিজেই ভুতর্কি দেন।

বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শাহিনুর আলম জানান, আমার জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন ভালো ভালো প্রতিষ্ঠানে রয়েছে। অনেক কষ্ট করে সকলের সহযোগিতায় এই বিদ্যালয়কে ভালো অবস্থা নিয়ে গেছি। আমার পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া স্বয়-সম্পত্তি দিয়েই আমি চলতে পারি। নিজের মত করে গড়ে তোলা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জনই আমার বেতন থেকে অনেক টাকা ব্যয় করি।

দৈনিক বগুড়া