শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৮ ভাদ্র ১৪৩২

দেশের যত নীলকণ্ঠ পাখি

দেশের যত নীলকণ্ঠ পাখি

সংগৃহীত

সময়টা তখন ভোররাত। ২০২৩ সালের ৮ মার্চ। ‘ধূসর-ডানা কালো দামা’ নামের বিরল এক পরিযায়ী পাখি খুঁজতে হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের মান্দারগাছ-লাগোয়া টাওয়ারে উঠেছি। পাখিটিকে ভারতের দার্জিলিং ও নৈনিতালে দেখলেও এ দেশে দেখার সৌভাগ্য হয়নি। এত কষ্ট করেও পাখিটির দেখা পেলাম না। ১২ মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করেও লাভ হলো না।

তবে এই চার দিনে এ দেশের বেশ কিছু বিরল, দুর্লভ ও বর্ণিল পাখির দেখা পেয়েছি। তেমনই এক বর্ণিল পাখিকে মান্দারগাছের ওপর দিয়ে উড়ে যেতে দেখেছিলাম ৮ মার্চ সকাল সোয়া সাতটার দিকে। পাহাড়ি এই পাখিটির নাম পাহাড়ি নীলকণ্ঠ বা ডলারবার্ড।

পাহাড়ি নীলকণ্ঠ কোরাসিফরমেস বর্গ ও কোরাসিডি বা নীলকণ্ঠ গোত্রের পাখি। এ দেশে পাখিটির আরও দুটি জাতভাই রয়েছে। কোরাসিডি গোত্রের পাখিদের আকার মাঝারি ও পালক উজ্জ্বল। পায়ের তিনটি আঙুল সামনের দিকে ও একটি পেছন দিকে অবস্থিত। সুইচোরা এবং মাছরাঙাও এই বর্গের সদস্য।

নীলকণ্ঠ গোত্রের বর্ণিল পাখিগুলোকে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এরা মূলত কীটপতঙ্গভুক। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এরা গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। আয়ুষ্কাল পাঁচ থেকে ছয় বছর। এ দেশে দেখতে পাওয়া তিন প্রজাতির নীলকণ্ঠের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া হলো—

পাহাড়ি নীলকণ্ঠ (ওরিয়েন্টাল ডলারবার্ড): শুরুতে যে পাখিটির কথা বলেছিলাম, সেটিই পাহাড়ি নীলকণ্ঠ। বৈজ্ঞানিক নাম Eurystomus orientali। মূলত সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন ও বনের প্রান্তে এদের দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বাস করে।

নীলকণ্ঠ (ইন্ডিয়ান রোলার): এই পাখিটিই এই গোত্রের সবচেয়ে পরিচিত পাখি। বৈজ্ঞানিক নাম Coracias benghalensis। একসময় প্রজাতিটির দুটি উপপ্রজাতি ছিল। বর্তমানে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের বসবাসকারী প্রজাতিটি নীলকণ্ঠ নামে পরিচিত। আর পূর্বাঞ্চলেরটি ইন্দো–চীনা নীলকণ্ঠ। নীলকণ্ঠের বিস্তৃতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে।

গাছের ডালে ইন্দো-চীনা নীলকন্ঠ। ঢাকার উত্তরায়

গাছের ডালে ইন্দো-চীনা নীলকন্ঠ। ঢাকার উত্তরায়

ছবি: লেখক

ইন্দো–চীনা নীলকণ্ঠ (ইন্দো-চায়নিজ রোলার): সম্প্রতি এটি নীলকণ্ঠ থেকে পৃথক হয়ে নতুন প্রজাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বৈজ্ঞানিক নাম Coracias affinis। মূলত দেশের পূর্বাঞ্চলে বাস করে। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগেও বেশ দেখা যায়। এটি বাংলাদেশ ছাড়া দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, যেমন মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় দেখা যায়।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ:

শিরোনাম: