শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তারেক রহমানের ‘খোয়াব বাড়ি’তে শিল্পা শেঠী এখন আর আসেনা-

তারেক রহমানের ‘খোয়াব বাড়ি’তে শিল্পা শেঠী এখন আর আসেনা-

২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাস। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর জরুরি সচিবালয় থেকে বের হয়ে ছুটছেন এয়ারপোর্টে। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে যখন ঢুকছেন, তখনই এমিরেটসের প্লেন ল্যান্ড করল। দৌড়াতে দৌড়াতে বোডিং ব্রিজের কাছে দাঁড়ালেন ফুল হাতে। বলিউডের হার্টথ্রব নায়িকা শিল্পা শেঠীকে আমন্ত্রন জানাতে বাবরের আকস্মিক এই দৌড়ঝাপ।

অবশেষে শিল্পী শেঠীকে নিরাপত্তা দিয়ে মার্সিডিজ গাড়িতে করে বাবরের নেতৃত্বে গাজীপুরের বিলাসবহুল এক প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো। বাড়ির নাম ‘খোয়াব ভবন’ । গাজিপুরবাসী এই ভবনকে চিনেন জলসা ভবন নামে। জলসা ভবনের গেইটের ভেতরে ফুল হাতে অপেক্ষারত ছিলেন তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। তাদের আমন্ত্রনেই শিল্পা শেঠীর ৪৮ ঘন্টার বাংলাদেশ সফর। দুই দিন দুই রাতের এই সফরে সূর্যের আলো কারো চোখে পড়েনি।

২০০৫ সালে ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ খ্যাত আলিশা ঢাকায় এসেছিলেন কনসার্ট করতে। ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে পৌছানোর পরই আয়োজককে জানানো হয় আলিশাকে খোয়াবে যেতে হবে। ভাইয়া মিট করবেন। চারদলীয় জোট সরকার আমলে ভাইয়া নামটি ‘আশির্বাদ’ মনে করা হতো। কিন্তু আয়োজক বেচারা বুঝতে পারেনি ‘ভাইয়া’ টা কে? পাত্তা দেননি। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আয়োজককে। অভিযোগ অনুমতি ছাড়া কনসার্টের আয়োজন। এরপর আলিশাকে বলা হয় গাজীপুরে যেতে। এরকম প্রস্তাবে তো আলিশা হতবাক। তিনি শরণাপন্ন হন ভারতীয় দূতাবাসের। ভারতীয় দূতাবাস, খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনা বুঝতে পারে। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর কে কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। পরদিন সকালে আলিশা এবং কনসার্টের অন্য অংশগ্রহণকারীরা ভারতে চলে যান।

বহুল  আলোচিত ‘খোয়াব’ ভবনটির সেই জাঁকজমক এখন আর  নেই, অনেকটা গুরুত্বহীন আর দশটা সাধারণ বাড়ির মতো গাজীপুর শহরের অভিজাত এলাকা দক্ষিণ ছায়াবীথির একেবারে শেষ সীমানার গলি দিয়ে ডান দিকে ঢুকলেই দ্বিতীয় বাড়িটি দেখতে পাবেন। বাড়ির নাম খোয়াব হলেও নির্ধারিত জায়গায় ‘খোয়াব’ ফলকটি আর নেই। তুলে ফেলা হয়েছে অনেক আগেই। বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা কেউই বহিরাগত বা অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে চান না। 

বাড়িটির কেয়ারটেকার দেলোয়ার হোসেন জানান, বাড়ির তিন তলায় দুটি পরিবার সাত বছর ধরে ভাড়ায় থাকেছে। ভাড়া তুলে মাস শেষে ঢাকায় তারেক জিয়ার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বাসায় তার স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসেন। গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন বছরে কয়েকবার বাড়ির খোঁজ খবর নিতে আসেন। বিশেষ করে বাড়ির রং,চুনকামসহ সংস্কার কাজ ঠিকঠাক মতো হলো কিনা তিনি তা দেখতে আসেন।

খোয়াব নিয়ে এখনও স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা থেমে নেই। এখনও তারা খোয়াব-এর অতীত নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন। অভিযোগ রয়েছে গাজিপুরের জনপ্রিয় সাংসদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা হয়েছিলো আলোচিত সমালোচিত এই ভবনে বসে।

দৈনিক বগুড়া