শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী যেকোনও কাজ করবে: সেনাপ্রধান

দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী যেকোনও কাজ করবে: সেনাপ্রধান

সেনাবাহিনি প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ (বিএসপি, বিজিবিএম, পিবিজিএম, বিজিবিএমএস, পিএসপি, জি) বলেছেন, দেশের যেকোন দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী ও টেকসই বেবিাঁধ নির্মাণে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সকাল ১১টায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে এসে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউসে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময়কালে সেনাবাহিনি প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ১৬টি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট রয়েছে। এর মধ্যে উপকূলে পানি সংকট নিরসনের জন্য তিনটি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আরও লাগলে সেটি আমাদের কাছে চাইতে হবে।

২১ জুন থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ৪৬০টি ঘর সংস্কার করেছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তহবিল থেকে এ পর্যন্ত ১০ হাজার দুস্থ পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা অসহায় দুস্থদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। জলাবদ্ধতা নিরসনেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কাজ করছে। জামালপুর ও সিরাগঞ্জে সেনাবাহিনী বাঁধরক্ষায় কাজ করে সফল হয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় সরকার দায়িত্ব দিলে সেনাবাহিনী কাজ করবে।

সেনা প্রধান বলেন, করোনা মহামারিতে আমরা মানুষের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। এটা চলমান থাককে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে গর্ভবর্তী মায়েদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। করোনা ভাইরাসের কারণে যারা হাসপাতালে যেতে পারেন না তাদেরকে আমরা চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি। ডাক্তারও এ সময় চিকিৎসার কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। যশোরের ঝিকরগাছায় চিকিসা সেবার কথা উল্লেখ করে সেনাবাহিনী প্রধান আরও বলেন, আমরা সেখানে দুই হাজারেরও বেশি গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এ সেবা আমরা দিয়ে যাবো এবং প্রয়োজনীয় ওষুধও সরবরাহ করবে সেনাবাহিনী।

করোনা ভাইরাস ও উপকূলীয় বেড়িবাঁধ সংস্কার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, লকডাউন স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিষয়। স্থানীয় প্রশাসন সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করবো। দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী ও টেকসই উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যেকোন দুর্যোগে সরকার সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দিলে আমরা দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।

সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাঁধ রক্ষার কাজ সেনাবাহিনীকে দিলে সেনাবাহিনী করবে কীনা? আমরা বলেছি, সরকারের দেয়া কাজ করতে সেনাবাহিনী প্রস্তত রয়েছে। এটিকে আমরা গর্ব মনে করি। কীভাবে কাজগুলো করলে সুন্দর হবে এখন সেটি আমরা পরিকল্পনা করছি। বাঁধ রক্ষায় এই মুহূর্তে লোক দরকার, বাঁশসহ অন্যান্য সারঞ্জামাদি দরকার হবে। সবকিছু পর্যাপ্ত পাওয়া নাও যেতে পারে। তবুও আমরা চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, সেনাবাহিনী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করতে সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। আমরা যে কাজটি করবো সেটি চেষ্টা করবো ভালোভাবে করার। সেনাবাহিনীর উপর জনগণের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রয়োজন স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা। সেটি যদি আমরা পাই তাহলে কাজটি আমরা ভালোভাবে করতে পারবো। সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়কেও সেটি নিয়ে ভাবতে হবে।

সকাল ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে সাতক্ষীরায় পৌছান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। এরপর তিনি সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।

এসময় তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় অম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহয়তা দিতে আমরা এসেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে আসিনি। এখানে কারো উপর চড়-থাপ্পড় দেয়া যাবে না। সকলের সঙ্গে বিনয়ী হতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা মানবিক কাজে এখানে এসেছি।’

এ সময় তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আগে নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে। একটি বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কাজ করছি। করোনার কারণে প্রটেকশন নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যদি করোনা না থাকত তাহলে সেনা সদস্যরা লুঙ্গি গামছা পরে কাজে নেমে পড়তো। তবে করোনার কারণে সেটি হচ্ছে না। দুর্যোগে কিভাবে কাজ করতে হয় সেনা সদস্যরা সেটি জানেন। করোনা ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করতে হবে সেগুলো সেনা সদস্যদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ক্রান্তিকালে যে সকল সেনা জনগণের পাশে রয়েছে জনগণ তাদের মনে রাখবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর কোয়াটার মাস্টার জেনারেল লে. জেনারেল শামসুল হক, যশোর সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল হুমায়ুন কবির, সামরিক গোয়েন্দা পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মামুম, আইএফসিআর এর পরিচালক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ ইবনে জিয়াদসহ পদস্থ কর্মকর্তাগণ। মতবিনিময় শেষে সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ হেলিকপ্টার যোগে আকাশ পথে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগর এবং খুলনার কয়রা এলাকা পরিদর্শন করেন।

দৈনিক বগুড়া