শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধুনটে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প

ধুনটে দিন দিন হারিয়ে  যাচ্ছে মৃৎশিল্প

বগুড়া ধুনট উপজেলায় মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) তৈরির প্রচলন ছিল। কালের প্রবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সে মৃৎশিল্প। বর্তমানে ধাতব তৈজসপত্র বাজারে সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।

বগুড়া ধুনট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলকাজুলী গ্রামে মৃৎশিল্পের (কুমার শিল্প) প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে । মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবসাহি শ্রীঃ মাখন পাল জানান, এক সময় নিজেদের এলাকার জমি থেকে মাটি তুলে এ শিল্পে ব্যবহার করা হতো। আর এখন অনেক দূর থেকে বাড়তি দামে মাটি কিনে এনে বানাতে হয়। তাছাড়া মাটির দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে প্রতিটি ভটভটি মাটির দাম ১ হাজার টাকা ও মাটি মাড়াইয়ের জন্য ৪০০ টাকা দিতে হয়। মৃৎশিল্প শ্রীমতিঃ লিপি পাল বলেন বর্তমানে বাজারে প্লাস্টিক, সিরামিক, মেলামাইন, সিলভার, এমনকি লোহার তৈরি সামগ্রীর সহজলভ্যতা, কম দামের কারণে মানুষ মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) ব্যবহারে অনীহা দেখায়। ফলে শিল্পীরা তাদের উৎপাদনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। পৌচিবাড়ি গ্রামে মৃৎশিল্পের কারিগর শ্রী সন্তোষ পাল বলেন, এ পেশায় আয় কম। আমাদের গ্রামের অনেক কুমারের কাজ করতো। কুমারের কাজে আয় কম, সংসার চলে না তাই এখন অন্য পেশা বেছে নিয়েছে তারা । সরকার আমাদেরকে সহযোগিতা করলে একটু ভালো থাকতে পারতাম। এ ব্যবসায় এখন আর সংসার চলে না। যা আয় হয় তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে সংসার চালাতে হয়। বাপ-ঠাকুরদার পেশা ছাড়তে পারছি না। তাই এ শিল্প নিয়েই পড়ে আছি। ধুনট সদর ইউনিয়নের সদস্য শ্রীঃ প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার সরকার বলেন আরো অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করতে শুরু করেছে। আগে মানুষ মাটির হাঁড়ি-পাতিল কলসী, টালী ইত্যাদি ব্যবহার করতো। বাজারে প্লাস্টিক সহজলভ্য হওয়ায় মাটির তৈজসপত্রের চাহিদা কমে গেছে।আদি মৃৎশিল্প (কুমার শিল্প) গবেষকরা বলেছেন, মৃৎশিল্প একটি আদি পেশা। এ পেশার মানুষরা আমাদের প্রথম সভ্যতার তৈজসপত্রের চাহিদা পূরণ করা ছাড়াও বাড়ির দেয়ালে টেরাকোঠার নান্দনিক টাইলস তৈরি করে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করতো। বর্তমানে ধাতব তৈজসপত্র বাজার দখল করায় এবং এর স্থায়িত্ব বেশি হওয়ায় মানুষ মাটির তৈজসপত্রের ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। তবে এই মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন শো-পিস, পাতিল, কলসী, টাইলস, মাইট, রসের হাড়ি ইত্যাদি দৃষ্টিনন্দন দ্রব্য তৈরি করে রফতানি করা গেলে এই পেশায় জড়িত শিল্পীরা মানবেতর জীবন থেকে সচ্ছলতায় ফিরে আসতে পারবে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিয়ে এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন।

দৈনিক বগুড়া