শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে আমলে গোনাহকারীও মুক্তি পাবে

যে আমলে গোনাহকারীও মুক্তি পাবে

আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু। কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ কথা ঘোষণা করেছেন। মানুষ যত গোনাহই করুক, যদি তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস থাকে আর আল্লাহর কাছে গোনাহ থেকে ক্ষমা চায় তবে মহান আল্লাহ ওই বান্দাকে ক্ষমা করে দেবেন। এ মর্মে কুরআন-সুন্নায় রয়েছে অনেক ঘোষণা।

কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা জীবনে কোনো দিন আল্লাহর কোনো হুকুম-আহকাম মেনে চলেননি, এমন বান্দাকেও আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করবেন।

যারা অপরাধ বা গোনাহের কাজ ছাড়া কোনো কাজ করেনি। গোনাহগার ব্যক্তিদের এ আমলটি হলো মহান আল্লাহর প্রতি ভয়। হাদিসে কুদসিতে এমনই এক ব্যক্তিকে ক্ষমা করার কারণ উল্লেখ করেছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যা মুমিন মুসলমানের জন্য অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহ আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের আগের যুগের এক লোককে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দান করেছিলেন। লোকটির যখন মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসে তখন তিনি তার সন্তান-সন্তুতিদেরকে লক্ষ্য করে বললেন- ‘আমি তোমাদের বাবা হিসেবে কেমন ছিলাম। তারা বলল, ‘আপনি বাবা হিসেবে উত্তম ছিলেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘ওই ব্যক্তি কোনো নেক আমল করে আল্লাহর দরবারে জমা করেননি।’ তাই সে (ব্যক্তি) তার সন্তানদেরকে নসিহত করলেন- ‘এ কথা খেয়াল রেখ! আমি যখন মারা যাব; তখন আমার মৃত দেহকে জ্বালিয়ে (ভষ্ম করে) দেবে এবং এর কয়লাকে ভালভাবে পিষে ঝড়ের দিনে বাতাসে উড়িয়ে দেবে।'

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ওই ব্যক্তি এ বিষয়ে তার ছেলেদের কাছ থেকে অঙ্গিকার গ্রহণ করেছিলেন। (সে মারা যাওয়ার পর) তার সন্তানরা ওয়াদা মতো তার মৃত দেহকে ছাঁই করে এক প্রবল বাতাসের দিনে উড়িয়ে দেয়।

অতপর আল্লাহ আদেশ করলেন, ‘হয়ে যাও’ সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে গেল।
আল্লাহ বললেন, ‘হে আমার বান্দা! তুমি এ কাজ কেন করেছিলে? (এ কাজ করতে কেন বলেছিলে?)
তখন সে (লোকটি) বলল, ‘(হে আল্লাহ!) আপনার ভয়ে। আপনার সামনে হাজির না হওয়ার জন্য।

অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাকে অনুগ্রহ (রহমত) করেছেন।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তাকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মানুষের মুক্তির জন্য আল্লাহর প্রতি ভয় ও রহমতের বিকল্প নেই। হাদিসে কুদসির বর্ণনা মতে পরকালের জবাবদিহির ভয় থাকা এ ব্যক্তি শুধু আল্লাহর প্রতি ও আল্লাহর রহমতই হেফাজত করেছে।

সুতরাং কোনো কারণে কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক আমল, ইবাদত-বন্দেগি না করতে পারলেও আল্লাহর রহমতের আশা ও তাঁকে ভয় করা জরুরি। কেননা এ ভয় এবং রহতের কারণেই আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করবেন।

আল্লাহর প্রতি অগাধ আস্থা এবং বিশ্বাসই ক্ষমা লাভের অন্যতম মাধ্যম। আবার আগের যুগের নবি-রাসুলদের অনুসারীদের অনেক সুন্দর সুন্দর ঘটনাও আল্লাহর ক্ষমা লাভে মুমিন মুসলমানের জন্য অনুপ্রেরণা। যে ঘটনা ও অনুপ্রেরণা থেকে মানুষ ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত হয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার রহমতের আশার পাশাপাশি সব কাজে তাকে ভয় করার তাওফিক দান করুন। আশা ও ভয়ের মাধ্যমে দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্য ও স্বচ্ছলতার পাশাপাশি পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

দৈনিক বগুড়া