শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন, এলাকায় চাঞ্চল্য

বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন, এলাকায় চাঞ্চল্য

সংগৃহীত

সাধারণত আমরা জানি ধান থেকে চাল উৎপাদন হয়; কিন্তু এই চাল যদি হয় বাঁশের ফুল থেকে তবে বিষয়টি কেমন হয়? এমনি এক বিরল ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের পাকাপান গ্রামে।

রীতিমতো বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করে এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন ঐ গ্রামের ২৫ বছর বয়সী দিনমজুর সাঞ্জু রায়। তিনি ঐ গ্রামের কৃষক ছিমল রায়ের ছেলে।

জানা গেছে, দেশে ২৩ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রাম্য ভাষায় (বেইড়া বাঁশ) বলে, এই বাঁশের ফুল থেকে এখন উৎপাদন করা হচ্ছে চাল। অন্যান্য চালের মতোই বাঁশের ফুল সংগ্রহকৃত বীজ ধানের মিলে ভাঙিয়ে তা থেকে চাল তৈরি করা হচ্ছে। বাঁশ ফুলের মাধ্যমে উৎপাদিত এই চাল দিয়ে ভাত, খিচুড়ি, পায়েশসহ আটা তৈরি করে তা দিয়ে পিঠা এবং রুটি বানিয়ে খাওয়া হচ্ছে। যা অত্যন্ত সুস্বাদু বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। উৎপাদিত এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই বাঁশের চাল থেকে আয় রোজগারেরও উৎস সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পাকাপান গ্রামের সাঞ্জু রায়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সাঞ্জু রায় তার বাড়ির পাশে বাঁশের ঝাড় থেকে বাঁশফুল থেকে ধান আকৃতির বীজ সংগ্রহ করছেন। সেই বীজ পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। তারপর সেগুলো ভাঙাবেন। বাড়ির উঠানে প্রস্তুতকৃত এমন কয়েকটি বীজের বস্তা রেখেছেন। কিছু চাল ভাঙিয়ে রেখেছেন গ্রামের অনেকেই তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন করার বিষয়টি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। যা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।

প্রতিবেশী মিনতি রানী ও সুনিল রায় বলেন, বাঁশের ফুল থেকে চাল সংগ্রহ করার বিষয়টি আমরা প্রথমে সাধারণ মনে করেছিলাম, যে সাঞ্জু এসব কি করছে? পরে তার এই চাল তৈরি এবং খেয়ে আমরা বুঝতে পেরেছি সে একটি ভালো কিছু করেছে। বর্তমানে তার এই উৎপাদিত চাল অনেকেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এ ব্যাপারে সাঞ্জু রায় বলেন, আমি একজন দিনমজুর। আজ থেকে এক মাস আগে পাশের গ্রামে কাজ করতে যাই। সেখানে কাজের ফাঁকে কালি চন্দ্র রায় (৭০) নামে একজন পরিচিত ব্যক্তি আমাকে বাঁশের ফুল থেকে চাল সংগ্রহ করে খাওয়া যায় এ বিষয়টি জানান। তার কথামত আমি সেগুলো সংগ্রহ করে প্রথমে নিজে খাই। ভালো লাগলে এরপর থেকে তা সংগ্রহ করে যাচ্ছি। এতে নিজেদের খাবারের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, পাশাপাশি এই চাল ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছি।

এক প্রশ্নের জবাবে সাঞ্জু বলেন, এটি কষ্টসাধ্য কাজ। প্রতিদিন ২০ কেজি বীজ সংগ্রহ করা যায়। এসব পরিষ্কার করে ভাঙিয়ে চাল করলে প্রচলিত ধানের সমপরিমাণ চাল হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, এটি গবেষণার বিষয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোনো কৃষিপণ্য সার্টিফাই করলে তখন আমরা সেই বিষয়ে সম্প্রসারণের কাজ করি।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রকিবুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাঁশের ফুল থেকে চাল উৎপাদন হয় এই প্রথম জানলাম। দেশের কোথাও এমন ঘটনা শোনা যায়নি। এটি একটি বিরল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে আমরা শিগগিরই গবেষণার কাজ শুরু করবো।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

সর্বশেষ: