শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মৌসুমের প্রথম নিলামে চায়ের পাতা, সর্বোচ্চ দর কেজি প্রতি ৪৩৫ টাকা

মৌসুমের প্রথম নিলামে চায়ের পাতা, সর্বোচ্চ দর কেজি প্রতি ৪৩৫ টাকা

সংগৃহীত

২০২৪-২৫ মৌসুমের সপ্তাহের প্রথম নিলামে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ কেজি চা তোলা হয়। চায়ের সর্বোচ্চ দর উঠেছে প্রতি কেজি ৪৩৫ টাকা। বাংলাদেশ চা বোর্ডের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির আয়োজনে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের প্রগ্রেসিভ টাওয়ারে এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, চা উৎপাদকরা সরাসরি নিজেরা চা বিক্রি করতে পারেন না। চা বিক্রি করতে হলে উৎপাদককে নিলামে বিক্রি করতে হয়। সাধারণত বাগান মালিকরা বাগান থেকে পাতা তুলে চা তৈরির পর তা গুদামে পাঠান। ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করে চায়ের মান নির্ধারণ করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে চা বিক্রি করা হয়।

এ ছাড়া বাগান মালিকরা চাইলে নিজস্ব বাগানের উৎপাদিত চায়ের ২৫ শতাংশ নির্ধারিত পরিমাণ কর দিয়ে প্যাকেটজাত করতে পারেন। চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার ২০২৪-২৫ মৌসুমে ২৯ এপ্রিল ২০২৪ থেকে ২৩ এপ্রিল ২০২৫ মোট ১০০টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫০টি, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ২৬টি এবং পঞ্চগড়ে ২৪টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। চট্টগ্রামে ২০২৪-২৫ নিলাম বর্ষের প্রথম নিলাম শুরু হয় গতকাল সোমবার।

চট্টগ্রামে নতুন নিলাম বর্ষে ৫০টি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। মৌসুমের শেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ২১ এপ্রিল। চট্টগ্রামের নিলামগুলো সপ্তাহের প্রতি সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। তবে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, ঈদে মিলাদুন্নবীসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রীয় ছুটির কারণে পাঁচটি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। অন্যদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নতুন মৌসুমে অনুষ্ঠিত হবে ২৬টি নিলাম।

শ্রীমঙ্গলে প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ৩০ এপ্রিল। মৌসুমের শেষ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে ২০২৫ সালের ২৩ এপ্রিল। শ্রীমঙ্গলে দুটি ছাড়া বাকি সব নিলামই অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। প্রতি মাসে শ্রীমঙ্গলে দুটি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া পঞ্চগড়ে দ্বিতীয় বছরের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনলাইন নিলাম হবে ২৪টি।

চট্টগ্রামে এবারের সপ্তাহিক নিলামে চায়ের সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৪৩৫ টাকা কেজি। এবার ২৮ হাজার ৫২৫ বস্তা (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি) অর্থাৎ ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ কেজি চা নিলামে তোলা হয়েছে। গত বছর দেশের ১৬৮টি বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা চাষিদের হাত ধরে ১০ কোটি ২৯ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়। চা চাষের ১৮৪ বছরের ইতিহাসে এই উৎপাদন ছিল সর্বোচ্চ। তবে উৎপাদনে এমন সুখবর চা বাগান মালিকদের জন্য উল্টো দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে নিলাম দরে। গত মৌসুমে চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়ে মোট ৮৯টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ চা বিক্রি হয় চট্টগ্রামের নিলামে। ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে শেষ নিলামের মাধ্যমে ২০২৩-২৪ মৌসুমের নিলাম শেষ হয়।

চট্টগ্রামের নিলামে দেখা যায়, প্রথম নিলামে চায়ের কেজিপ্রতি দর ওঠে ২৪৯.২৪ টাকা। শুরুর দিকে দর ভালো থাকলেও তা বেশি দিন টেকেনি। শুরু হয় ধারাবাহিক দরপতন। তাতে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম ১০০ টাকার নিচে নেমে আসে ৪৬তম নিলামে। নিলামে কেজিপ্রতি চায়ের গড় মূল্য দাঁড়ায় ৯৮ টাকা। শেষ ৪৯তম নিলামে এই দাম আরো কমে নেমে আসে ৭৭.৬৮ টাকায়।

শেয়ারবাজারের মতো চায়ের নিলামেও দরপতন টেকাতে নিলামে ন্যূনতম মূল্য বা ফ্লোরপ্রাইস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সবচেয়ে সাধারণ মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য রাখা হয় ১৬০ টাকা কেজি। এর চেয়ে ভালো মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য যথাক্রমে ২১০, ২২৭, ২৪৫ ও ২৭০ টাকা। সবচেয়ে ভালো মানের চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০০ টাকা কেজি। সে অনুযায়ী চা কেনাবেচা করতে একমত হন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

বাংলাদেশ চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শাহ মঈনুদ্দিন হাসান বলেন, ‘এবারের নিলামটা ব্যতিক্রম। কারণ এবারই প্রথম ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। সে হিসাবে ভালো দর উঠেছে। এ ছাড়া নতুন মৌসুমের প্রথম নিলামে ক্রেতাদের উপস্থিতিও ভালো ছিল। সামনে আরো নিলাম আছে। সেগুলোতে কেমন দর ওঠে সেটা এখন দেখার বিষয়। আমরা আশা করছি, এবার ভালো নিলাম হবে।’

সূত্র: কালের কন্ঠ

সর্বশেষ: