শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন করে আশার আলো জাগছে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের

নতুন করে আশার আলো জাগছে শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের

ব্যাপক পতনের পর শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে আশা জাগছে বিনিয়োগকারীদের। কর্তৃপক্ষের বেশ কিছু পদক্ষেপে গত সপ্তাহে উত্থানে ফিরেছে শেয়ারবাজার। এক সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ফিরেছে চার হাজার কোটি টাকার বেশি। সম্প্রতি শেয়ারবাজারে কয়েকটি ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকের পর বাজার ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকে। বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না হলেও শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করতে পারেন এমন খবরে চাঙা মেজাজে ফিরেছে বাজার। যার ফলশ্রুতিতে সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বাড়ে ২৬৯ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৯ টাকা।

জানা গেছে, করোনা সংকট কাটিয়ে চলতি বছর কয়েকবার বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে শেয়ারবাজার। তবে আগস্টের পর বাজার তুলনামূলক উত্থান হয়েছে। নভেম্বরে এসে বাজার ফের পতনের মুখে পড়ে। পতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীরা মতিঝিলের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। এরপরে বন্ড ইস্যু নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠকের কয়েকদিন পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গেও বৈঠক হয়। গত ১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। সাক্ষাৎ শেষে তিনি জানান, পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। কোন বাধার কারণে পুঁজিবাজার তার নিজস্ব গতিতে যেতে পারছে না, সে বিষয়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। এসব খবরে আশা জেগেছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। গত বছরের মে মাসে করোনা পরিস্থিতিতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামকে প্রধান করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠনের পর  থেকে পুঁজিবাজারে পরিবর্তন শুরু হলেও চলতি বছরের শেষদিকে এসে বড় ধাক্কা খায়। প্রথম দিকে  কেন্দ্রীয় ব্যাংকও পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেয়। ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগসীমার বাইরে গিয়ে আলাদা তহবিল গঠনের সুযোগ দেয়। এতে বাজার চাঙ্গা হয়ে প্রথমবারের মতো ৭ হাজার পয়েন্টের সীমা অতিক্রম করে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপে পুঁজিবাজারে তারল্য কমে যায়। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তার সীমার মধ্যে রয়েছে কি না, সে বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। পাশাপাশি প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ করে। যাতে কেনার শেয়ারের মূল্য বেড়ে গিয়ে নির্ধারিতসীমা অতিক্রম করলেই জরিমানার মুখে পড়তে হয় ব্যাংকগুলোকে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো বন্ডের বিনিয়োগও বিনিয়োগসীমার মধ্যেই হিসাবে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছেও প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ সব ঘটনায় বাজারে অযাচিত বিক্রির চাপ  তৈরি হয়।

আটকে যায় নতুন বিনিয়োগও। এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। ফলে শুরু হয় ধসের মতো পরিস্থিতি। এসব পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ পেতে উদ্যোগ নেয় বিএসইসি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফের বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। ফলে গত সপ্তাহের লেনদেনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিদায়ী সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের লেনদেনে ডিএসইতে চার হাজার কোটি টাকার মূলধন বেড়েছে। সপ্তাহের প্রথম দিন ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯১ টাকা। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৯০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯০ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইতে পাঁচ হাজার ৩০৯ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৭৯ টাকার  লেনদেন হয়েছে। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৯ কোটি ৯৭ লাখ ৭৬ হাজার ৪৪০ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন বাড়ে ২৬৯ কোটি ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৭৩৯ টাকা। সপ্তাহের পাঁচ দিনের লেনদেনে ডিএসইতে চারদিন সূচক বেড়েছে। পক্ষান্তরে কমেছে এক দিন। চার দিনে সূচক বেড়েছে ১৫৪ পয়েন্ট। এক দিনে কমেছে ৯৬ পয়েন্ট।

দৈনিক বগুড়া