সংগৃহীত
কোরআনে কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিভিন্ন জায়গায় তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির নামে শপথ করেছেন। অতিগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ের ‘গুরুত্ব’ বান্দাকে বোঝানোর জন্য এসব শপথ করেছেন তিনি।
গোটা কোরআনে কারিমের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সেসকল শপথগুলোতে আমরা দেখি, কোথাও আল্লাহ একবার একটি বস্তুর নামে শপথ করেই কোনো কথা বলেছেন। কোথাও দুবার আবার কোথাও তিনবার শপথ করে গুরুত্বপূর্ণ কোনোকিছু বলেছেন। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, কোরআনের এমন একটি জায়গা আছে, যেখানে আল্লাহ তায়ালা ৭টি বস্তুর নামে টানা সাতবার শপথ করে তারপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন তিনি। আর সেই ঘটনাটি ঘটেছে ত্রিশ নম্বর পারার সুরা শামসের ভেতরে।
এই সুরার শুরুতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর সৃষ্টিজগতের অতিগুরুত্বপূর্ণ এবং সবচেয়ে বড় ৭টি সৃষ্টির নামে শপথ করে অতঃপর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। নিঃসন্দেহে একজন মুমিনের কাছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ‘আমার রব গোটা কোরআনের কোথাও এত বেশি সংখ্যকবার একাধারে শপথ করে কোনো কথা বলেননি, যেমনটি তিনি সুরা শামসে বলেছেন। তাহলে কী সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা? কী তার মূল্য?’
চলুন জেনে নিই, কোন সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা যা বলার জন্য রব্বেকা’বা সাতবার শপথ করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা সুরা শামসের শুরুতে ইরশাদ করেছেন-
১. শপথ সূর্যের এবং তার কিরণের
২. শপথ চাঁদের, যখন তা সূর্যের পর আবির্ভূত হয়
৩. শপথ দিনের, যখন সে সূর্যকে প্রকাশ করে
৪. শপথ রাতের, যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে।
৫. শপথ আসমানের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন তাঁর
৬. শপথ জমিনের এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন তাঁর
৭. শপথ নফসের (মানুষের) এবং যিনি তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন তাঁর— অতঃপর তাকে ভালো-মন্দ উভয় বিষয়ের জ্ঞান দান করেছেন।
উল্লিখিত আয়াতসমূহে আল্লাহ তায়ালা চন্দ্র-সূর্য, দিন-রাত, আসমান-জমিন এবং মানুষের শপথ করে যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি বলেছেন তা হলো, ‘এই পৃথিবীতে আল্লাহর সৃষ্টি জগতের ভেতরে সফল-স্বার্থক জীবন সাধনে সিদ্ধ একমাত্র সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে সংশোধন করতে পেরেছে। আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে।’
অর্থাৎ,আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত ভুল থেকে মুক্ত হয়ে খাঁটি মানুষে রূপ নিল, সে-ই সফল। আর যে ব্যক্তি তার ভুল-ত্রুটি সঙ্গে নিয়েই জীবন পার করল, নিজেকে সংশোধন করতে পারল না, সে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্ত।
সম্মানিত পাঠক, কথাটি শুনতে হয়তো ছোট মনে হচ্ছে, কিন্তু আসমান-জমিনের মালিকের কাছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে তিনি কথাটি বলতে গিয়ে টানা সাতবার শপথ করেছেন। কাজেই বোঝা গেল, একজনের মুমিনের কাছে আত্মসংশোধনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু তার জীবনে হতে পারে না। আল্লাহ আমাদের সকলকে আত্মসংশোধনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: কালবেলা



















