শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

ভারতের শেয়ারবাজারে বড় ধস, ট্রাম্পের শুল্কের প্রভাব

সংগৃহীত

সপ্তাহের শেষে বড় পতনের মুখে পড়েছে ভারতের শেয়ারবাজার। গতকাল শুক্রবার সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকেরই বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে আছে আরেকটি সূচক, ব্যাংক নিফটি। গতকাল তিনটি সূচকেই প্রায় ১ শতাংশ পতন হয়েছে।

গতকাল দিন শেষে সেনসেক্স সূচকের মান দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৮৫৭ দশমিক ৭৯ (-৭৬৫.৪৭), নিফটি ৫০ সূচকের মান ২৪ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৩০ (-২৩২.৮৫) আর ব্যাংক নিফটির মান হয়েছে ৫৫ হাজার ০০৪ দশমিক ৯০ (-৫১৬.২৫)। খবর ইকোনমিক টাইমস

বিএসই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মোট বাজারমূল্য₹৪৪৫ লাখ কোটি রুপি থেকে কমে গতকাল₹৪৪০ লাখ কোটি রুপিতে নেমে এসেছে। সব খাতে ব্যাপক শেয়ার বিক্রির কারণে মাত্র এক অধিবেশনে বাজার মূলধন প্রায় পাঁচ লাখ কোটি রুপি কমে গেছে। সাপ্তাহিক হিসাবে দেখা গেছে, টানা ছয় সপ্তাহ সূচকগুলোর পতন অব্যাহত আছে। ৮ আগস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে সেনসেক্স ও নিফটি ৫০—উভয় সূচকই প্রায় ১ শতাংশ করে পয়েন্ট হারিয়েছে।

গতকাল বড় ধাক্কা খেয়েছে এইচডিএফসি ও ভারতীয় এয়ারটেলের স্টক। ফলে আরও পতন হয়েছে সূচকের। সব খাতের সূচকেরই পতন হয়েছে গতকাল।

নিফটির অধিকাংশ খাতেই গত সপ্তাহে বড় পতন হয়েছে। নিফটি স্মল ক্যাপ ও মিড ক্যাপ যথাক্রমে ১ দশমিক ৪ শতাংশ ও ১ দশমিক ১ শতাংশ পড়েছে। পুরো সপ্তাহের বিবেচনায় ব্যাংক খাত ভালো মুনাফার মুখ দেখেছে। এ ছাড়া ধাতুও কিছুটা লাভের মুখ দেখেছে। কিন্তু আইটি, ফাইন্যান্স, জ্বালানি, অয়েল অ্যান্ড গ্যাস, এফএমসিজি ও ওষুধ খাতের বড় পতন হয়েছে।

গত সপ্তাহে একাধিক বড় কোম্পানির স্টকের দরপতন হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের দরপতন হয়েছে ৭ শতাংশের মতো। বস্ত্র রপ্তানি কোম্পানি কেপিআর মিল, গোকলদাস এক্সপোর্ট, বর্ধমান টেক্সটাইল, ট্রিডেন্টের স্টকের দাম অনেকটাই কমেছে। উল্টো দিকে আশার ছবি দেখিয়েছে হিরো মোটোকর্প। গতকাল বেড়েছে এলআইসির দামও।

দ্য মিন্টের সংবাদে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে ভারতের দুর্বল বাজার আগেই বড় ধাক্কা খেয়েছে। কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়া, অতিমূল্যায়ন ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি পুঁজি বেরিয়ে যাওয়া—এসব উদ্বেগ এখনো কাটেনি। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপ ও আক্রমণাত্মক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ৫০ শতাংশ শুল্কের কারণে ভারতের জিডিপি ১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

জিওজিত ইনভেস্টমেন্টসের গবেষণাপ্রধান বিনোদ নায়ার বলেন, মার্কিন শুল্ক ভারতের রপ্তানিতে কী প্রভাব ফেলবে—এ আশঙ্কায় ভারতীয় শেয়ারবাজার তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা টানা শেয়ার বিক্রি করায় দেশি সূচকের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।

নায়ার আরও বলেন, শুল্কসংক্রান্ত চলমান উদ্বেগের প্রভাব বিবেচনায় বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিতে শুরু করেছে। ২০২৫ ও ২০২৬ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। ফলে ভারতের বাণিজ্য ও সামষ্টিক অর্থনীতি ঘিরে যে অনিশ্চয়তা, তা কেবল বাড়ছেই।

এদিকে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও ধাক্কা খেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ভারতের বাজার থেকে বিপুল অঙ্কের বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে। মার্চের পর থেকে পরিস্থিতি বেশ কিছুটা ভালো হয়। এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ভারতের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। কিন্তু জুলাই থেকে আবার বিদেশি বিনিয়োগ বেরিয়ে যাওয়ার ছবি সামনে এসেছে। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের জেরে আগস্ট মাসেও সে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

সর্বশেষ:

শিরোনাম: