
সংগৃহীত
সিন্ডিকেটের কারসাজি অস্থির বগুড়ার বগুড়ার সারের বাজার। ফলে ভরা আমন ও প্রাক শীত মওশুমের সবজি চাষীরা নির্ধারিত দামে সার পাচ্ছেন না বগুড়ার প্রান্তিক চাষীরা। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। অনিয়ম যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরবরাহ সংকট গুজবের পালে হাওয়া দিয়ে ফায়দা লুটছে অসাধু সিন্ডিকেট। চলতি মৌসুমে রাসায়নিক সার ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে একশ্রেণির অসাধু ডিলার।
বগুড়া সদরসহ শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, গাবতলী, কাহালু, শেরপুর, আদমদীঘি, দুপচাচিয়া, ধুনট, সোনাতলা, সারিয়াকান্দি উপজেলায় অবৈধভাবে সার মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে, এমন তথ্যে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) জেলার আদমদীঘি উপজেলার একটি গুদামে মজুত ও পাচারকালে বিপুল পরিমাণ সার জব্দ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি বছর সার ডিলার ও মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট বাড়তি দামে সার বিক্রি করে। মৌসুম শুরুর আগেই সার সংকটের গুজব ছড়ানো হয়। গুদাম, বাড়িতে মজুত এবং কালো বাজারে পাচার করে সংকটের অজুহাত দেয়। কিন্তু খুচরা দোকানে সরবরাহ করে বাড়তি দাম হাঁকাচ্ছে। চলতি মৌসুমে সরকার অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে সার না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া ও টিএসপি কেজি ২৭ টাকা, এমওপি ২১ টাকা এবং ডিএপি ২২ টাকা শুধুই কাগজ-কলমে। সংকট নেই, বিপুল পরিমাণ সার মজুত রয়েছে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আমন মৌসুমে তিন মাসের চাহিদা মেটানোও সম্ভব।
বিএডিসির তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারা দেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও বর্তমানে বিভিন্ন গুদামে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার, দুই লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, দুই লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং দুই লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি মজুত রয়েছে। এই সার দিয়ে তিন মাসের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এছাড়া ২৫ হাজার টন টিএসপি, এক লাখ ১০ হাজার টন এমওপি এবং এক লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি নতুন করে দেশে পৌঁছেছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বিএডিসি ও বিসিআইসি দুটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে সাত হাজার ১৫০ জন ডিলার রয়েছে। বিএডিসি অনুমোদিত পাঁচ হাজার ২২ জন এবং বিসিআইসির দুই হাজার ১২৮ জন। যাদের অধিকাংশই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া। সম্প্রতি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর সার ডিলার নিয়োগে নীতিমালা পরিবর্তন করেছে মন্ত্রণালয়। যারা অনিয়মে জড়িত এবং অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের সবার ডিলার লাইসেন্স বাতিল করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার আদমদীঘি উপজেলার মুরইল বাজারের রাফি ট্রেডার্স নামের একটি খুচরা সার বিক্রেতার গুদামে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৭০ বস্তা রাসায়নিক সার জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযুক্ত ডিলার আশরাফ হাজীর ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিশাত আনজুম অনন্যা। রাফি ট্রেডার্সের সেই গুদাম সিলগালা করা হয়েছে।
আদমদীঘি উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রবিউল ইসলাম জানান, মুরইল বাজারের মেসার্স রাফি ট্রেডার্সের গুদামে সরকারি নিয়মবহিভুত ভাবে অতিরিক্ত সার মজুত ও সেখান থেকে পাচার করার তথ্য পেয়ে অভিযান চালানো হয়। ট্রাকে বোঝাই করা ২৪৫ বস্তা পটাশ পাওয়া গেছে। এরপর গুদামে মজুত রাখা অতিরিক্ত ৮২৫ বস্তা ইউরিয়া ও পটাশ জব্দ করা হয়। ট্রাক বোঝাই ২৪৫ বস্তা পটাশ প্রকাশ্যে নিলামে ২ লাখ ৪১ হাজার ৩২৫ টাকায় বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়। ৮২৫ বস্তা রাসায়নিক সারও নিলামে বিক্রি করা হবে।
জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন বগুড়া ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনাম বলেন, কিছু কিছু ডিলার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সার সংগ্রহ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রয় করছে। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো. ছামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, সার বিতরণে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে জিরো টলারেন্সে আছি। সম্প্রতি গাবতলী, শিবগঞ্জ ও নন্দীগ্রাম উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কয়েকজন ডিলারকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।