মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

ইসলামী জীবন

জীবিত থাকতে নিজের কবরের জায়গা নির্ধারণ করা কি জায়েজ?

জীবিত থাকতে নিজের কবরের জায়গা নির্ধারণ করা কি জায়েজ?

সংগৃহীত

মৃত্যু জীবনের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। জন্ম নিলে একদিন মারা যেতে হবে। মায়াঘেরা দুনিয়ার রূপ-রঙ ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে হবে—যেখানে কেউ কারও বন্ধু হবে না, হবে না শত্রুও। নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)

সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)

সুরা আবাসাতে রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘সেদিন মানুষ নিজের ভাই, নিজের মা, নিজের পিতা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে পালাবে। তাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর সেদিন এমন সময় এসে পড়বে, সে নিজেকে ছাড়া আর কারও প্রতি লক্ষ্য করার মতো অবস্থা থাকবে না।’ ( আয়াত : ৩৪-৩৭)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবীকে (সা.) বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে এসে দাঁড়াবে। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? এমন হলে তো খুবই লজ্জার ব্যাপার। উত্তরে হুজুর (সা.) বললেন, ‘হে আয়েশা, সেদিনের পরিস্থিতি এত ভয়ংকর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনাও করতে পারবে না।’ (মুসলিম : ৬৯৩৪)

একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর যত দ্রুত সম্ভব তাকে কাফন-দাফন করতে হয়। হাদিস শরিফে নবীজি (সা.) হজরত আলিকে (রা.) লক্ষ্য করে বলেন, হে আলি, তিনটি জিনিসের ক্ষেত্রে বিলম্ব করবে না— ১. নামাজের যখন সময় আসবে তখন নামাজ আদায় করা থেকে দেরি করবে না। ২. মৃত ব্যক্তির জানাজা যখন উপস্থিত হবে তখন কাফন-দাফন সম্পন্ন করতে দেরি করবে না। ৩. কোনো অবিবাহিতা মেয়ের জন্য যখন কোনো উপযুক্ত পাত্র পাবে, তখন তাকে পাত্রস্থ করা থেকে বিলম্ব করবে না। (তিরমিজি : ১/২০৬) মৃত্যুর পর পরকালীন জীবনের প্রথম মঞ্জিল হচ্ছে কবর। যারা এ মঞ্জিল থেকে সহজে মুক্তি পাবেন তাদের বাকি মঞ্জিলগুলো সহজ ও আরামদায়ক হবে। আর যারা এ মঞ্জিলে শাস্তি পাবেন তাদের পরবর্তী মঞ্জিলগুলো আরও ভয়ংকর হবে।

আমাদের সমাজে অনেকেই নিজের মৃত্যু পরবর্তী কবরের জায়গা জীবদ্দশাতেই ঠিক করে রাখতে চান। ইসলামি শরিয়তে এভাবে নিজের কবরের জায়গা নির্ধারণ করে যাওয়া কি জায়েজ?

চলুন, জেনে নিই শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গি— ইসলামি শরিয়তে, যদি কোনো জমি কবরস্থানের জন্য ওয়াকফ করে দেয়া হয়, তাহলে সেখানে কোনো ব্যক্তি বিশেষের কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণ করার অনুমতি নেই। কারণ, ওয়াকফ করে দেয়ার কারণে এই কবরস্থানের জায়গায় সাধারণ মানুষের অধিকার রয়েছে এবং তা জনসাধারণের কল্যাণের জন্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। তবে কেউ নিজের মালিকানাধীন জায়গায় কবরের জন্য জায়গা নিধারর্ণ করে রাখতে চাইলে এতে কোনো সমস্যা নেই।

এভাবে মালিকানাধীন জমিতে কবরের জন্য জায়গা নির্ধারণের বিষয়টি কোনো হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত নয়। তবে হজরত ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর পক্ষ থেকে এমন কাজের বিষয়টি সাব্যস্ত। তিনি মৃত্যুর আগে ১০ অথবা ২০ দিনারে নিজের কবরের জন্য জায়গা কিনেছিলেন। (সিরাতে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ: ৯৯; সিয়ারু আলামিন নুবালা : ৫ম খণ্ড- ১৪৪)

সূত্র: কালবেলা