শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় বেড়েছে পূজার মন্ডপ, দম ফেলার সময় নেই প্রতিমাশিল্পীদের

বগুড়ায় বেড়েছে পূজার মন্ডপ, দম ফেলার সময় নেই প্রতিমাশিল্পীদের

আগামী ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে পাঁচ দিন ব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হতে যাচ্ছে। শারদীয় দুর্গা উৎসবকে সামনে রেখে বগুড়ায়  প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। এই সময়ে দম নেওয়ার ফুরসত নেই কারিগরদের। তবে বছরের অন্য সময়ে মৃৎশিল্পের তেমন কোনো কাজ না থাকায় কৃষিকাজ অথবা অলস সময় পার করতে হয় এসব মৃৎশিল্পীদের। দুর্গা উৎসব আসলে এসব মৃৎশিল্পীদের কদর বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য সময় তারা কৃষি কাজসহ বিভিন্ন পেশায় কাজকর্ম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

করোনাকালীন পরিস্থিতির মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করেছে এসব প্রতিমা শিল্পীরা। করোনাভাইরাসের দুশ্চিন্তা থাকলেও সেপ্টেম্বর মাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার কমার কারণে আনন্দ-উৎফুল্লতা নিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা প্রতিমা তৈরির কাজে নেমে পড়েছেন তারা। সঠিক সময়ে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ করতে হবে বলে পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বাড়তি চার-পাঁচ জন শ্রমিক নিয়ে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন দম ফেলার সময় নেই প্রতিমা শিল্পীদের। ইতোমধ্যেই মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা গড়ে তুলেছেন দেবী দুর্গার প্রতিমা। এখন রঙ তুলির আঁচড়ে সেই প্রতিমাকে দেওয়া হচ্ছে অনিন্দ সুন্দর রূপ।

প্রতিমা শিল্লী শিবগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের সাদুল্ল্যাপুর গ্রামের হারাধন মহন্ত বলেন, এবার ১২টি প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন। ‘সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে কাজের গতি বেড়ে গেছে। এই পুরো মাস দম ফেলানোর  সুযোগ কম আমাদের। তবে বছরের অন্য সময় মাটির কাজ থাকে না। এই এক দেড় মাসের আয় দিয়ে পুরো বছরের সংসার চলে। আমাদের মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা আগের মতো নেই, যে কারণে আমাদের এ পেশায় থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।’ 

জানা গেছে, ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর আগমন ধ্বনি অনুরণিত হবে। ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসনের মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। উঁচু-নিচু, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে পরবর্তী চার দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ আপামর বাঙালি মেতে থাকবে দুর্গোৎসবে। আগামী ১৫ অক্টোবর দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে দেবী বিদায় নেবেন মর্ত্য থেকে। 

হিন্দু ধর্মের বিশ্বাস ও পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী দুর্গা দূর কৈলাশ ছেড়ে পিতৃগৃহ মর্ত্যধামে আসবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায় চড়ে। বিজয়া দশমীতে দোলায় চড়ে দেবী বিদায় নেবেন। এর অর্থ প্রাকৃতিক বিপর্যয়, রোগ-শোক, হানাহানি, মারামারি, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে।

বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবছর পুরো জেলায় ৬৭৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বছর পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। গতবছর করোনার কারণে মণ্ডপের সংখ্যা কম ছিল ৬৩৫টি। এখন এ সকল মণ্ডপে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমাশিল্পীরা।

বগুড়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার দেব জানান, ‘জেলায় এবার ৬৭৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়ে জেলা  প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। এবারও দুর্গোৎসব হবে অনুষ্ঠানবিহীন। সব পূজা হবে আনুষ্ঠানিকতা মেনে। পূজার যে জাঁকজমক, আলোকসজ্জা এগুলো থাকবে না। কারণ করোনায় মানুষ বিপদগ্রস্ত। কেন্দ্রীয়ভাবে উৎসবের খরচ দিয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পাঁচ দিন ব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করব। 

শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুবীর কুমার দত্ত বলেন, ‘শিবগঞ্জে এবার ৬০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। গতবারের চেয়ে ৬টি পূজা মণ্ডপ বেড়েছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণে আমরা বড় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ঈশ্বরের কৃপায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু কমায় পূজার আয়োজন ও প্রতিমা তৈরির কাজ শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। 

শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, শারদীয় দুর্গা উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বাহিনীর টহল অব্যাহত থাকবে। যাতে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে।’

দৈনিক বগুড়া