শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বের কাছে হার মেনেছে চলমান তাপপ্রবাহ

বগুড়ায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বের কাছে হার মেনেছে চলমান তাপপ্রবাহ

সংগৃহীত

সারা দেশে চলমান তাপপ্রবাহে বগুড়াসহ দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ছুঁয়েছে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার বেশ কয়েক জায়গায় এর চেয়েও বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ অবস্থায় সবাই ঘরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করলেও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা তপ্ত রোদেও ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন সড়কে।

বাইরের প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হার মেনেছে তাদের দায়িত্বের কাছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কষ্ট কিংবা অভিযোগ নেই কারোরই। হাসিমুখেই অন্য স্বাভাবিক সময়ের মতো পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে বগুড়া শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বগুড়া শহরের সাতমাথা, থানা মোড়, বড়গোলা, দত্তবাড়ী, ইয়াকুবিয়া মোড়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেলা বাড়লেও শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এসব এলাকায় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য তুলনামূলক কম। সবকিছু যেন একপ্রকার থমকে আছে। তবে কর্মদিবস হওয়ায় সকাল থেকেই সড়কে গাড়ির চাপ। সেজন্য যথারীতি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট ও সদস্যদের।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, তীব্র গরমেও খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে ও মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্ব পালন করছেন বগুড়া জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সদস্যরা। বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা প্রচণ্ড গরমে ঘেমে জবুথবু হয়ে গেছেন। কপাল ভেয়েও পড়ছিল ঘাম। তাতে চেহারা হয়ে গেছে তৈলাক্ত। কিছুসময় পরপরই পানি পান করছেন তারা। তবে গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না। অধিকাংশ জায়গাতেই একসঙ্গে একাধিক সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আবার কিছু জায়গায় বিশ্রাম নিয়ে পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন তারা।

ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলছেন, যত কিছুই হোক দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। তীব্র তাপপ্রবাহে সারা দেশের মানুষেরই একই অবস্থা। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই লু হাওয়া এসে গায়ে লাগছে। সবাইকে গরম, রোদ, রুক্ষ পরিবেশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এ অবস্থায় সবাই ছায়াযুক্ত স্থানে থাকতে পারলেও আমাদের সেই সুযোগ নেই। দায়িত্বের নিরিখে তপ্ত রোদেও সড়কে থাকতে হচ্ছে। এটি এমন এক দায়িত্ব, যেখানে সামান্য গাফিলতি করলে মুহূর্তেই বড় ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে। তাই রোদ, গরম সবকিছু মাথায় নিয়েই নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে সড়কে নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

জিয়াউল হক নামের এক সার্জেন্ট বলেন, বর্তমান তাপমাত্রা বাংলাদেশের ভৌগোলিক প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। যার জন্য দায়িত্ব পালন করতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় খুব বেশি দরকার না হলে রাস্তায় বের হচ্ছেন না কেউ। তবে আমাদের তো সেই সুযোগ নেই। শুধু দায়িত্বের নিরিখেই পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা রোদ মাথায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যেন এই গরমে সাধারণ মানুষকে যানজটের কারণে কোনো কষ্টে পড়তে না হয়। এছাড়া বেশি করে পানি পান করা, বিশ্রাম নেওয়ার বিষয়টিও খেয়াল রাখছি।

সাথমাথা এলাকায় দায়িত্ব পালন করা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, তাপমাত্রা যতই হোক দায়িত্ব আমাদের পালন করতেই হবে। এ বিষয়ে পিছিয়ে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমরা পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেছি। এক্ষেত্রে ছাতা মাথায় দিয়ে যথাসম্ভব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো দেখভাল করছেন। গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে স্যালাইন, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ বিভিন্ন উপাদান বগুড়া জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। বিশ্রাম নিয়ে পালাক্রমে সবাই ডিউটি করছি। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গাড়ির চাপ কিছুটা কম রয়েছে।

প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে বগুড়াবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে নিরলস দায়িত্ব পালন করছেন বগুড়ার ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। তাদের পেশাদারিত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তার নির্দেশনায় ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একটু বাড়তি স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ট্রাফিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যের জন্য সুপেয় পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ছাতা সরবরাহ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার (ট্রাফিক) বলেন, তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই মুহূর্তে উত্তপ্ত রোদে ইউনিফর্ম পরে পিচঢালা সড়কে দাঁড়িয়ে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব একাগ্রচিত্তে পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এসময় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে একদিকে ফোর্সের মনোবল যেমন চাঙ্গা হচ্ছে, অপরদিকে দাবদাহের মধ্যেও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসী পাচ্ছেন সর্বোত্তম সেবা।

জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, এই অসহনীয় গরমে রাস্তায় ডিউটি করা সত্যিই কষ্টকর। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ট্রাফিকের পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই উদ্যোগ ট্রাফিকের সদস্যদের তীব্র গরমের মধ্যেও দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে।

সর্বশেষ: