
সংগৃহীত
বগুড়ার শেরপুরে পানির চাপে কাটাখালী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধসে পড়েছে। এতে শেরপুর ও ধুনট উপজেলার অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। এই বাঁধের ওপর দিয়েই এসব এলাকার মানুষ চলাচল করতেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চককল্যাণী গ্রামের কাটাখালী বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট পানির স্রোতে ভেসে যায়। বাঁধ ধসে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের চকধলী, চককল্যাণী, কল্যাণী, জয়নগর, জয়লাজুয়ান, বেলগাছি, জোড়গাছা ও আউলাকান্দির সঙ্গে ধুনট উপজেলার পেঁচিবাড়ি, জালশুকা, বিশ্বহরিগাছা ও ভুবনগাতি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি সড়কের পাশের গাছপালা ও দোকানঘর ভেসে গেছে। এতে করে চককল্যাণীসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন শেরপুর ও ধুনট উপজেলার অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষ।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাঙা বাঁধের দুই পাশে ভিড় করে আছেন এলাকার শতশত মানুষ। চককল্যাণী গ্রামের আনোয়ার, কাশেম, রফিক, সোহাগ, এজাজসহ অন্তত ১০ জন কৃষক বলেন, বর্ষার সময় এই বাঁধ সংস্কার করার পরিকল্পনাই ছিল ‘অপরিকল্পিত’। শুষ্ক মৌসুমে কাজটি করা হলে বাঁধ ধসের ঘটনা ঘটত না, সরকারের টাকাও অপচয় হতো না। বাঁধ সংস্কারের সময় অপরিকল্পিতভাবে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়েছিল। ওই পাইপ দিয়ে দক্ষিণ পাশে পানি প্রবাহিত হওয়ার সময় বাঁধটি ধসে পড়ে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত বাঁধের দক্ষিণ পাশের ফসলি জমির জলাবদ্ধতা নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের মধ্যে প্লাস্টিকের পাইপ বসানো হয়। গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় ওই পাইপ দিয়ে পানি প্রবাহ শুরু হলে বাঁধটি ধসে পড়ে। অপরিকল্পিতভাবে এই পাইপ বসানোর কারণেই এই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছেন বলে দুষছেন স্থানীয়রা।
গত মার্চে কাজ শুরু হলে বর্ষায় বাঁধটি ধসে যেত না। অপরিকল্পিতভাবে কাজ করায় এই অবস্থা হয়েছে বলেও জানান সুঘাট ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নূরনবী মন্ডল।
ভাঙন এলাকার সোহাগ বলেন, ‘কাটাখালী বাঁধে একটি স্লুইসগেট নির্মাণের জন্য বেশ কিছুদিন আগে আমরা মানববন্ধন করেছিলাম। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত বিষয়টি অবগত করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখনো তার কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন দ্রুত আমাদের এই সমস্যা সমাধান করে স্বাভাবিক চলাচল ও নির্বিঘ্নে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়।’
এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি টেকসই স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যাতে করে বর্ষায় নদীর পানি এই খালে প্রবেশ করতে না পারে এবং বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নদীতে নেমে যেতে পারে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তাই তাদের দাবি, বাঁধের দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং টেকসই স্লুইসগেট স্থাপন ছাড়া এই দুর্যোগের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তারা দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আব্দুল জব্বার বলেন, ‘বাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। টেকসই বাঁধ নির্মাণে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক খান বলেন, ‘বাঁধ ভাঙনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরকে ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন।’
এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক বলেন, ‘বগুড়ার শেরপুর উপজেলাধীন উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের কাটাখালী বাঁধের ভাঙন স্পটে আমরা পরিদর্শন করেছি। বাঁধটি যেহেতু খালের মুখে তাই ভাঙনস্থল বন্ধ করে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। আর স্থানীয়রাও চাইছেন এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান। শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে আমরা স্থায়ীভাবে কালভার্ট করার সিদ্ধান্ত নিব।’