শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ত্বক নিয়ে প্রচলিত কিছু সত্য-মিথ্যা

ত্বক নিয়ে প্রচলিত কিছু সত্য-মিথ্যা

ত্বক হচ্ছে আমাদের শরীরের বহিরাঙ্গিক অংশ। যার সৌন্দর্য ধরে রাখতে মানুষ কত কিনা করেন। কারণ কোনো মানুষের নজর প্রথমেই পড়ে তার ত্বকের ওপর। তাই এর যত্ন নিয়ে মানুষের ভাবনার অন্ত নেই।

চিকিৎসকদের পরামর্শের বাইরেও ত্বক নিয়ে রয়েছে নানা মিথ। এর কোনোটি সত্য, কোনোটি শুধুই কাল্পনিক। সত্যটি সবার জন্য উপকারী হলেও মিথ্যাটা বিশ্বাস করা আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই জেনে নিন ত্বক সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার সত্য-মিথ্যাগুলো-

ত্বকের ক্রমাগত পুনর্জন্ম হয়

অনেকেই মনে করেন ত্বকের ক্রমাগত পুনর্জন্ম হয়। এই ধারণা সঠিক। ত্বক আপনার শরীরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ এবং বাইরের বিশ্বের মধ্যে গতিশীল আত্মরক্ষামূলক বেষ্টনী তৈরি করে। এপিডারমিসে (ত্বকের বাইরের স্তর) থাকা কেরাটিনোসাইটস নামের কোষ ক্রমাগত সরবরাহের জন্য নতুন কোষ উৎপাদনে বিভক্ত হয়ে পড়ে। যা এই স্তরের ভেতর দিয়ে যায় এবং এর পৃষ্ঠ থেকে পতিত হয়। ত্বক হচ্ছে নতুন কোষের একটি সমৃদ্ধ উৎস এবং এটি করতে গিয়ে ক্রমাগত পুনর্জন্ম লাভ করে।

মানসিক বা শারীরিক চাপ ত্বককে অস্বাস্থ্যকর করতে পারে

এটি সত্য। আধুনিক জীবনে এমন অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে যার জন্য আমরা চাপকে দায়ী করি। তবে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ত্বকের নানা অবস্থা থেকে জানা যায়, জীবনের নানা ঘটনাবলীর প্রভাবে করটিসলসহ স্ট্রেস হরমোন (অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন স্টেরয়েড হরমোন) হয়। এটি ত্বককে অস্বাস্থ্যকর করে তোলে। তাই শারীরিক বা মানসিক কোনো চাপকে পাত্তা দেয়া যাবে না।

চকলেটের কারণে ব্রণ হয়

এটি মিথ্যা। ব্রণ সাধারণত কিশোর বয়সে দেখা দেয় যা ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সেও অব্যাহত থাকে। বয়ঃসন্ধিকালে টেস্টোস্টেরনের মতো অ্যান্ড্রোজেন বৃদ্ধির ফলে ব্রণ হতে পারে। ত্বকের ওপর তৈলাক্ত গ্রন্থির মাত্রার ওপর ব্রণ হওয়া নির্ভর করে। ত্বকের রোম রন্ধ্র এবং সিবেসিয়াস গ্রন্থির সংখ্যা অ্যান্ড্রোজেন সংবেদনশীলতার হার নির্ধারণ করে।

উচ্চ মাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া অনেক কারণে অস্বাস্থ্যকর। তবে এটি ব্রণের কারণ নয়। অনেকে মনে করেন, চকলেট খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, চকলেট মোটেও ক্ষতিকর নয় বরং কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে চকলেট।

প্রতিদিন দুই লিটার পানি পান

এটি একেবারেই ভুল। পান করা পানির পরিমাণ সরাসরি আপনার ত্বক প্রভাবিত করে না। ত্বকে পানি সরবরাহের কাজটি সম্পন্ন হয় ত্বকের অভ্যন্তরীণ স্তরের ভেতর দিয়ে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে। বিশেষ করে শুষ্ক পরিবেশে এপিডারমিস থেকে পানি হ্রাস পায়। ত্বকের জলবাহী অবস্থা বজায় রাখতে পানি প্রয়োজন এবং যখন আপনি সত্যিই পানিশূন্যতায় ভুগবেন তখন আপনার ত্বক হয়ে উঠবে নিষ্প্রাণ। একজন সুস্থ ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন কিডনি, হৃদযন্ত্র এবং রক্তনালী – ত্বকে পৌঁছানো পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। পান করার জন্য পানির কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ নেই। এটি নির্ভর করবে আপনি কতটা ব্যবহার করবেন এবং কতটা হারাবেন- তার পরিমাণের ওপর।

ওয়াশিং পাউডারে একজিমা হয়

এটি মিথ্যা। একজিমা এমন এক অবস্থা যা হলে ত্বক হয়ে ওঠে শুষ্ক, ফাটা এবং লাল। সাধারণত এটি বংশগত কারণে হয়ে থাকে। তবে সাবান, ডিটারজেন্ট বা ওয়াশিংপাউডার ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি ত্বককে শুষ্ক রাখায় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ ওয়াশিং পাউডারে চামড়া থেকে তেল সরিয়ে দেয়। জৈবিক ওয়াশিং পাউডারে এনজাইম নামের প্রোটিন থাকে যা চর্বি এবং দাগ সৃষ্টি হয় যে প্রোটিনের কারণে তা ভেঙে দিয়ে অপসারণ করে ফেলে। এক্ষেত্রে এটি একজিমাকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। কিন্তু এর কারণে একজিমা হয় না। তাই ত্বকের বিরক্তিভাব এড়াতে ওয়াশিং পাউডার ব্যবহারের পর কাপড় ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

সূর্যের আলো ত্বকের জন্য ভালো

সত্য-মিথ্যা দুটোই। অনেকে রোদের অনুভূতি উপভোগ করে। কিন্তু সূর্যালোকের ভালো ও খারাপ- উভয় দিকই রয়েছে। সূর্যকিরণ হচ্ছে আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মিশ্রণ।

সূর্যের আলোয় থাকা ইউভিবি ত্বকে ভিটামিন ডি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। সূর্যের আলো ছাড়া এই ভিটামিন খাবার থেকে পাওয়া গেলে সবচেয়ে ভালো। ত্বকের প্রদাহ কমাতে চিকিৎসকরা সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ইউভিএ এবং ইউভিবি- এর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করেন।

কিন্তু ত্বক যখন খুব বেশি ইউভিতে মেলে ধরা হয় তখন এটি ত্বকের কোষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যদি আপনার কোনো রোগ বা চিকিৎসায় প্রয়োজন না হয় তবে সূর্যের আলো থেকে নিজেকে বাইরে রাখা ভালো।

 

দৈনিক বগুড়া