রঙ্গীন লুঙ্গির সাথে কালো শার্ট গায়ে। পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল। গলায় রংচটা গামছা। মাথায় ক্যাপ। ছুটন্ত রিকশার চালকের আসনে এভাবেই দেখা গেল তাঁকে। নাম শফি আলম ।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড শেরশাহ মার্কেট, ধুনটমোড়, বটতলা, তালতলা এলাকায় রিকশা চালিয়ে চলে তার সংসার। এই আয়েই বৃদ্ধ বাবা মাসহ সাত সদস্যের পরিবার চালাতে তাকে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে ।
এভাবেই নিজের দুঃখ দূর্দশার কথা বলছিলেন রিক্সা চালক শফি আলম। মন খারাপের পালা শেষ হতেই মুখে হাসি নিয়ে শফি আলম বললেন, ঘরে জমজ তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে।
এ সামান্য আয়ে কিভাবে সংসার চলে? জানতে চাইলে আবারও চিন্তার রেখা দেখা দেয় শফি আলমের চোখে মুখে। শফি আলম বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর নামাপালা গ্রামের বাসিন্দা। নদী ভাঙনের করাল গ্রাসে ভিটেমাটি হারিয়ে অভাবের তাড়নায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে এ এলাকায় বসবাস শুরু করে।
শফি আলম জানায়, সকালে রিকশা নিয়ে বের হন। কাজ শেষ করে অনেক রাতে বাড়িতে ফিরতে হয়। সারা দিনের খাবারে বেশিরভাগ রুটি কলাই ভরসা। কাজের ফাঁকে শরীর চাঙা রাখতে কয়েক কাপ চা খান। কিন্তু প্রায় সময়ই টাকা বাঁচানোর জন্য দিনের খাবারে কাটছাঁট করেই চলেন শফি আলম। কারণ, টাকা না বাঁচালে এত সদস্যের সংসার চলবে কিভাবে? সবে জন্ম নেয়া তিন জমজ কন্যা সন্তানের জন্য তার চিন্তা যেন আরো বেড়ে গেছে। বর্তমানে তিন জমজ মেয়ের পূষ্টিকর খাবারের যোগান দিতে গিয়ে স্ত্রী ও পরিবার পরিজনদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দেয়া দায় হয়ে পড়েছে শফি আলমের।
শফি আলম আরো জানায়, রিক্সা চালিয়ে বাবা-মা স্ত্রী এবং দুই সন্তান নিয়ে ভালই চলছিল তার সংসার। সৃষ্টিকর্তা ঘর আলোকিত করে জমজ তিন তিনটি কন্যা সন্তান দিলে অনেকটা বিপাকে পড়েছে বলেই জানায় শফি আলম। সন্তানের ভালবাসায় নিজেকে রাত দিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে। রিক্সাচালক শফি আলমের চাওয়া এ উপজেলার সরকারী অফিসাররা যদি তার জন্য একটু সাহায্য সহযোগিতার ব্যবস্থা করত তাহলে তার সন্তানদের নিয়ে সংসার চালানো একটু হলেও সহজ হতো।
দৈনিক বগুড়া