রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গোয়াহরির বুকে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

গোয়াহরির বুকে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

সিলেটের বিশ্বনাথের ‘গোয়াহরি বিলে’ বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনায় হয়ে গেল ঐতিহ্যের পলো বাওয়া উৎসব। অন্তত ১৫ গ্রামের কয়েক শতাধিক মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। শনিবার (২১ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামের দক্ষিণের বড় বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরেন স্থানীয়রা।

উৎসবটি উপলক্ষে সপ্তাহখানেক আগে থেকে গ্রামগঞ্জে প্রচারণা চালানো হয়। পরে সকাল থেকে মাছ ধরার পলো-কুচা-জাল নিয়ে বিলের পাড়ে সমবেত হতে থাকেন কয়েক শতাধিক মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলপাড়ে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। পূর্ব নির্ধারিত সময় সকাল সাড়ে ১০টায় একসঙ্গে পলো নিয়ে বিলের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছেলে-বুড়ো সবাই। শুরু হয় ঝপ ঝপ পলো বাওয়া।

প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী এ পলো বাওয়া উৎসবে গোয়াহরি গ্রামের বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেন। এ সময় উৎসবটি উপভোগ করতে বিলের পাড়ে ভিড় জমান নানা বয়সের মানুষ। পলো বাওয়া উৎসব উপভোগ করতে আসা গোয়াহরি গ্রামের আনহার আলী জানান, শীত মৌসুমে তাদের পূর্বপুরুষেরা প্রায় দেড়শো বছর আগ থেকে এই পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছেন। তাই তারাও প্রতি বছর বার্ষিক পলো বাওয়া উৎসব পালন করে আসছেন।

তিনি জানান, অধিক পানি ও কচুরিপানা না থাকায় মাছ নিয়ে ঘরে ফিরছেন অনেকেই। এসব মাছের মধ্যে ছিল বোয়াল, শৈল, রুই, বাউশ, ঘনিয়াসহ বিভিন্ন জাতের মাছ।

গোয়াহরির বুকে ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব

স্থানীয়রা জানান, গোয়াহরি গ্রামের ঐহিত্য অনুযায়ী প্রতি বছরের মাঘ মাসের পহেলা তারিখ এই পলো বাওয়া উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এবার বিলে মাছ বেশি থাকায় এলাকাবাসী মিলে এ সময় পলো বাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

পলো বাওয়া উৎসবকে কেন্দ্র করে গোয়াহরি গ্রামে গত কয়েকদিন ধরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। গোয়াহরি গ্রামের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে এই ১৫ দিন বিলে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে গ্রামবাসীর ঐতিহ্য অনুযায়ী আগামী ১৫ দিন পর দ্বিতীয় ধাপে পলো বাওয়া হবে। এই ১৫ দিনের ভেতরে বিলে মাছ ধরা হবে না। তবে কেউ চাইলে হাত জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারবেন।

গোয়াহরি গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, পলো বাওয়া উৎসব আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। আমার কাছে পলো বাওয়া উৎসব খুব মজার বিষয়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমি এ উৎসবে অংশগ্রহণ করি। আমাদের গ্রামবাসী যুগ যুগ ধরে এই উৎসব পালন করে আসছেন।

মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, আমি একটি মাদরাসার শিক্ষক। এই মাছ ধরায় অংশ নিতে পেরে আমার খুব আনন্দ লাগছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী আশরাফুজ্জামান বলেন, আমি পলো বাওয়া অনেক বছর দেখিনি। আমার ভাগ্য ভালো এবার এ উৎসব দেখতে পারলাম। আমার খুবই ভালো লাগছে। পলো দিয়ে মাছ শিকার একটি মজার বিষয়।

সরেজমিনে গোয়াহরি বিলে গিয়ে দেখা যায়, মাছ শিকার করতে নিজ নিজ পলো নিয়ে বিলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন লোকজন। যাদের পলো নেই তারা ছোট ছোট বিভিন্ন জাল নিয়ে মাছ শিকার করেন। এ সময় মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করেন সব বয়সী মানুষ।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: