শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় ব্যাঙের বিয়ে

রাজশাহীতে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় ব্যাঙের বিয়ে

সংগৃহীত

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার তারাপুর গ্রামে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার বৃষ্টির জন্য দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চলে বিয়ের আয়োজন। 

জানা যায়, গ্রামের ৬০ থেকে ৭০টি বাড়ি থেকে বিয়ের যাবতীয় উপকরণ সংগ্রহ করা হয়। কৃত্রিম বৃষ্টির আবহ তৈরি করে গাওয়া হয় গ্রাম্য গীত। বিয়ে শেষে সন্ধ্যায় ছিল খাওয়াদাওয়ার আয়োজন। আয়োজন শেষে দম্পতি ব্যাঙকে একটি পুকুরে ছেড়ে দেওয়া হয়। 

ওই গ্রামের ইউসুফ আলী ও হাবিবা খাতুন নামের দুই শিক্ষার্থীর উদ্যোগে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়।  রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল মাত্র দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ৩০ মার্চ রাতে রাজশাহীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। রাজশাহীতে টানা ২৩ দিন বলতে গেলে বৃষ্টিই হয়নি। এ অবস্থায় তাপমাত্রাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দুই দিন ছিল ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অবস্থায় মানুষের বাড়ি থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। 

এই আয়োজনকে কেন্দ্র করে ওই গ্রামে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। গ্রামের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন, গৃহবধূর আয়েশা বেগম, রোজিনা খাতুন, মমতাজসহ গ্রামের একদল শিশু এ আয়োজনে ছিলেন বেশ সক্রিয়। তারা নেচে-গেয়ে আবির মেখে সারা গ্রামে ঘুরে বেড়ান। এরই মধ্যে ইউসুফ আলী ও হাবিবা খাতুন ব্যাঙ বর-বধূকে কলাগাছের খোলের মধ্যে ভরে বাউকে (বাঁশের বাতার তৈরি) নিয়ে ঘোরেন।  

ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোক্তা ইউসুফ আলী জানান, বৃষ্টি নেই, তাপমাত্রা বাড়ছে। গাছের আম ঝরে পড়ছে। অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা গ্রামের লোকজনকে নিয়ে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার আয়োজন করেছেন। তারা গ্রামের ৬০ থেকে ৭০টি বাড়িতে বৃষ্টির জন্য ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দে রে’ গানটি গেয়েছেন। পরে ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে একটি প্রতীকী পুকুর খনন করে সেখানে তাদের ছেড়ে দিয়েছেন। সন্ধ্যায় গ্রামের মণ্ডলপাড়ায় ওসিমুদ্দিন মণ্ডলের আমবাগানে ভোজের আয়োজন করা হয়। যারা এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে দাওয়াত করা হয়েছিলো। 

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, গত ১৪ এপ্রিল মাত্র দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। এর আগে গত ৩০ মার্চ রাতে রাজশাহীতে মাত্র ১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। রাজশাহীতে টানা ২৪ দিন বৃষ্টি নেই। এরমধ্যে বয়ে যাচ্ছে তীব্র ও মাঝারি তাপদাহ। এ অবস্থায় জনজীবনে দুর্বিসহ কষ্ট নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ব্যাঙ ডাকলে বৃষ্টি হয়। সনাতন বিশ্বাস অনুসারে, জলের দেবতা বরুণ প্রসন্ন হলে নামবে বৃষ্টি। দেবরাজ ইন্দ্রেরই আরেক নাম বরুণ। আর ব্যাঙের বিয়ে দিলে দেবতা তুষ্ট হয়ে বৃষ্টিবর্ষণের ব্যবস্থা করবেন বলে লোকজ বিশ্বাস ছিল। সেখান থেকেই উদ্ভব ব্যাঙের বিয়ে নামের এই অদ্ভুত প্রথার প্রচলন বলে জানা যায়।

এই বিয়েতে দুটি গর্ত করে একটি নারী ও একটি পুরুষ ব্যাঙকে গর্তগুলোতে রাখা হয়। সাধারণত সোনা ব্যাঙের সঙ্গে সোনা ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়। তবে পুরুষটি সোনা ব্যাঙ হলে নারীটি কোলাব্যাঙ হলেও হয়।

আমপাতা ও জামপাতার পানি দিয়ে গোসল করিয়ে ব্যাঙদুটোর গা ঢেকে দেয়া হয় বিয়ের পোশাকে। তারপর দুটি ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়৷ দুইপক্ষে ব্যাঙের অভিভাবক হিসেবে দুজন নারীকে থাকতে হয়৷ সাধারণত গ্রামগুলোতে যেকোনো ধর্ম থেকেই নারীদের অভিভাবক হওয়ার চল রয়েছে। তবে পুরুষ ব্যাঙের অভিভাবককে সাধারণত বয়সে বড় হতে হয়। 

সর্বশেষ: