বগুড়ার শেরপুরে ফসলি জমির মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে রোববার (২৫এপ্রিল) ভোররাতে ভোররাতে অভিযান চালানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলামের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন ও পুলিশ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদস্যরা। এসময় মাটি-বালু লুটের সঙ্গে জড়িত সাতজনকে আটক করা হয়। সেইসঙ্গে জব্দ করা হয় মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত তিনটি ড্রাম ট্রাক। উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দি বড়বিলা নামক স্থানে অবৈধ মাটি-বালুর পয়েন্টে এই অভিযান চালানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, উপজেলার কামারকান্দি ইউনিয়নের খামারকান্দি বড়বিলা নামক স্থানে প্রায় বাইশ বিঘা ফসলি জমি কেটে ও বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। পরে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মাটি-বালু লুটের সঙ্গে জড়িত আটক হওয়া ছয়জনের নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আর বাকি একজনের নিকট থেকে বিশগ্রাম গাঁজা উদ্ধার হওয়ায় তাকে তিনমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও একশ’ টাকা জরিমানার দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
দণ্ডাদেশ পাওয়া ওই ব্যক্তির নাম শামিম আহম্মেদ (৫৫)। তিনি পৌরশহরের হাটখোলা রোড এলাকার মনির হোসেনের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম আরও বলেন, আবাদি জমি নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। এ ধরণের কাজে জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে। মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারী দেন তিনি।
প্রসঙ্গত: মহামারী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘লকডাউন’ পরিস্থিতির মধ্যেও এই উপজেলায় থেমে নেই ফসলি জমির মাটি-বালু লুট। স্থানীয় প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের নাম ভাঙিয়ে অন্তত অর্ধশত পয়েন্টে বেশ দাপটের সঙ্গে এই মাটি-বালু লুটের মহোৎসবে মেতে উঠেন প্রভাবশালী একটি চক্র। অনেকটা নির্বিঘ্নেই দিনরাত সমানতালে ড্রেজার ও খননযন্ত্রের মাধ্যমে ফসলি জমির বুক চিরে অবৈধভাবে মাটি-বালু তোলা হচ্ছিল। এতে করে এলাকার শতশত বিঘা কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষি জমির সর্বনাশ করে কাটা মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এছাড়া মাটিভর্তি ভারী ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের ফলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। পাশাপাশি ধূলাবালিতে এলাকার পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন। সম্প্রতি জনগুরুত্ব এই সংবাদটি দেশের একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনে শুরু হয় তোলপাড়। এমনকি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও নজর পড়ে। তাই মাটিখেকোদের বিরুদ্ধে এই অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দৈনিক বগুড়া