বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বগুড়ায় চলতি রবি মৌসুমে ১১শ কোটি টাকার সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা

বগুড়ায় চলতি রবি মৌসুমে ১১শ কোটি  টাকার সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা

বগুড়ায় চলতি শীতকালীন (রবি) সবজি চাষ মৌসুমে ১১১৪ কোটি টাকার বিভিন্ন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলার চাষিরা। বগুড়ায় এ বছর সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলার কৃষি বিভাগ। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৩০ মেট্রিকটন সবজি।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বগুড়ায় গত বছর সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চলতি মৌসুমে একই পরিমাণ জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৩০ মেট্রিকটন। গত বছর জেলার উৎপাদিত সবজির গড় দাম ২০ টাকা কেজি নির্ধারণ করা হলেও এবার ধরা হয়েছে ৩৫ টাকা। এতে করে উৎপাদিত সবজির মূল্য দাঁড়ায় ১১১৪ কোটি সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। আরও জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বেগুন ১ হাজার ৮শ’ হেক্টর, মূলা আড়াই হাজার হেক্টর, শিম ১ হাজার ৩শ’ হেক্টর এবং ফুল ও বাঁধাকপি ২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।  

এদিকে বগুড়ার ফসলের মাঠজুড়ে কৃষকদের শীতকালীন সবজির জমির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। বেশি দাম ও অনুকূল আবহাওয়ায় জেলার চাষিরা প্রতি বছরই বাড়াচ্ছেন সবজি চাষের জমি। সেই ভোর থেকে কৃষকের মাঠে থাকা রবি শস্য মূলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ছিম, টমাটো, করলা, লাল ও পালংশাক, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য ফসলের জমিতেই কাটছে তাদের সারাদিন। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর, সদর, গাবতলী ও শেরপুরে উপজেলায় বেশি পরিমাণ জমিতে প্রায় সারা বছরই সবজির চাষ হয়ে থাকে। এরমধ্যে শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় সবজি চাষের পাশাপাশি বছরজুড়ে নানা জাতের চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ (আশ্বিন থেকে ফাল্গুন) পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। 

সদর উপজেলার শ্যামবাড়িয়া গ্রামের চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, এ মৌসুমে শীতকালীন সবজি চাষের জন্য আগেভাগেই জমি প্রস্তুত করে রেখেছিলাম, তবে বৃষ্টির কারণে সেই জমি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরেও দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি ও ৩০ শতক জমিতে পালংশাক চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত যে আবহাওয়া তাতে ভালো ফলনের আশা করছি। 

আরেক চাষি সবুজ প্রাং বলেন, এবার সবমিলে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করেছি। এক সময় এসব জমিতে শুধু ধান আর কলা চাষ করলেও কয়েক বছর ধরে সবজি চাষ বেশি করছি, কারণ সারা বছরই সবজির ভালো দাম পাওয়া যায়। তিনি আরও বলেন, ধান চাষে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ কম, অনেক সময় লোকসানও হয়, আর সবজি চাষে লাভ অনেক বেশি। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপ-পরিচালক মতলুবর রহমান বলেন, সাধারণত মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য মার্চ (আশ্বিন থেকে ফাল্গুন) পর্যন্ত রবি শস্যের মৌসুম। এ বছর অক্টোবরে বৃষ্টির প্রভাব থাকায় সবজির চাষের জমি বিলম্বিত হলেও বিঘ্নিত হয়নি। বগুড়ায় এ বছর সাড়ে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৩৩০ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৮৩০ মেট্রিকটন বেশি।

তিনি আরও বলেন, শীতকালীন সবজির দাম মৌসুমে শুরুতে বেশি থাকলেও ভরা মৌসুমে কমে যায়। তারপরেও বগুড়ায় উৎপাদনকৃত সবজি চাষে কৃষকদের লাভ অন্যান্য ফসলের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি কেজি সবজির দাম গড়ে ৩৫ টাকা করে হলেও চলতি রবি মৌসুমে প্রায় ১১১৪ কোটি সাড়ে ১৫ লাখ টাকার সবজি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। 

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: