মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্বাবা শরীফের যত অজানা তথ্য

ক্বাবা শরীফের যত অজানা তথ্য

 

পবিত্র ক্বাবা শরীফ পৃথিবীতে আল্লাহ পাকের একটি নিদর্শন। এই ক্বাবা শরীফ সম্পর্কে অনেক কিছুই আমরা জানি না। পৃথিবী সৃষ্টির সূচনা কাল থেকেই আল্লাহ পাক ক্বাবাকেই তার মনোনীত বান্দাদের মিলন মেলা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ক্বাবা ইসলামের রাজধানী হিসেবে একটি পরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি এই কাবাকে কেন্দ্র করেই। হাদীসে এমন আছে যে ক্বাবার নিচের অংশটুকু পৃথিবীর প্রথম জমিন। বিশাল সাগরের মাঝে এর সৃষ্টি। ধীরে ধীরে এর চারপাশ ভরাট হতে থাকে। সৃষ্টি হয় একটি বিশাল মহাদেশের। এক মহাদেশ থেকে সৃষ্টি হয় সাত মহাদেশের।

মক্কা ও ক্বাবার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর পদচিহ্ন স্মৃতি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পাক ক্বাবা সম্পর্কে বলেছেন, স্মরণ করুন সেই সময়কে যখন আমি ইব্রাহিমকে বাইতুল্লার স্থান নির্ধারণ করে বলেছিলাম যে আমার সঙ্গে কাউকে শরীক কর না। একনিষ্ষ্ঠতাই অন্যতম উপকরণ ছিল ক্বাবার।

আল্লাহ বলেন, স্মরণ কর যখন ইব্রাহীম ও ইসমাঈল ক্বাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তারা দোয়া করেছিল হে আমাদের রব আপনি আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন।

আজকের আলোচনায় থাকছে পবিত্র ক্বাবা সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য। আমরা আজ ক্বাবা শরীফের সূচনা থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কিছু তথ্য জানবো।

ক্বাবা অনেক বার পুনর্গঠন হয়েছে। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবার হামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন ক্বাবা মোট ১২ বার পুনর্গঠিত হয়েছে। সর্বশেষ ক্বাবায় পুনর্গঠন এর কাজ হয় ১৯৯৬ সালে। ক্বাবা নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছেন হযরত আদম (আ.), হযরত ইব্রাহীম (আ.) এবং সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

গিলাফের রং পরিবর্তন: ক্বাবার গিলাফ বললেই কালো রংটা আমাদের সবার সামনে ভেসে ওঠে। অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, ক্বাবার নির্মাণ হওয়ার পর থেকে কি ক্বাবার গিলাফের রং কালো? ক্বাবাকে গিলাফ দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এই প্রচলনই বা আসলো কবে?

ক্বাবাকে গিলাফ দিয়ে ঢেকে রাখার প্রচলন শুরু হয় মূলত জুরহাম গোত্রের শাসনামলে। পরে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইসাল্লাম একটি সাদা ইয়েমিনি কাপড় দিয়ে ক্বাবাকে আবৃত করেছিলেন। এরপর বিভিন্ন খলিফারা ক্বাবাকে ঢাকতে বিভিন্ন রং ব্যবহার করেছেন। কেউ ব্যবহার করছে লাল রংয়ের গিলাফ আবার কেউ ব্যবহার করেছেন সাদা রংয়ের গিলাফ। তবে আজকে যে আমরা কালো গিলাফ দেখতে পাই তার প্রচলন শুরু হয়েছে আব্বাসি শাসনামলে।

কাবা মূলত ডি আকৃতির, আধা গোলাকার ছিল। যা হযরত ইব্রাহীম (আ.) নির্মাণ করছিলেন। ইব্রাহীম (আ.) -এর পরে ইসলামের আগে কুরাইশরা ক্বাবার পুনঃর্নির্মাণ করেন। তখন তাদের টাকার অভাবের কারণে পুরো কাঠামো পুনর্গঠন করতে পারেনি। ক্বাবা বর্তমানে যেমনটা আছে তাকে হাকিম বলা হয়। একটি ছোট প্রাচীর দ্বারা চিহ্নিত করা আছে। ক্বাবার দরজা কয়টি এটা নিয়েও আমাদের জানা উচিত। মূল ক্বাবার দুইটি দরজা ছিল। যার একটি দিয়ে প্রবেশ করা হতো আর একটি বের হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো এবং ছোট্ট একটি জানালাও ছিল। তবে বর্তমানে ক্বাবার মূল দরজা একটি। কিন্তু ভেতর দিয়ে ক্বাবার ছাদে ওঠার জন্য একটি দরজা আছে।

ক্বাবা ঘরের ভিতরে কি আছে এই নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন জাগে। ক্বাবার অন্তরে তিনটি পিলার ক্বাবার ছাদকে ধরে রেখেছে। দুই পিলারের মাঝে একটি টেবিলে সুগন্ধি রাখা আছে। দেওয়ালের উপরাংশে একটি সবুজ কাপড় দিয়ে আবৃত করে রেখেছে। কাপড়টিতে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ক্যালিগ্রাফি খচিত।

হাজরে আল আসওয়াদ পাথরটি এখন একটি ফ্রেমের মাঝে রাখা। এমনকি এখনই পাথরটি বেশ কয়েকটি টুকরো। অবশ্য এক সময় এটি একটি পাথরই ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে পাথর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। তবে এই পাথরগুলোকে ফ্রেমের ভিতর রাখার কাজটি করেছেন আব্দুল্লাহ বিন জুবায়ের। আল সিবিবি পরিবার সর্বদা ক্বাবার রক্ষক ছিলেন। ইসলাম আসার পূর্ব থেকেই এই পরিবারটি রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছে। মূলত তারা পনেরো শতাব্দির রক্ষক এবং এই পরিবারের লোকেরাই উত্তরাধিকারসূত্রে ক্বাবার রক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে থাকেন।

বছরে দুইবার ক্বাবা পরিষ্কার করা হয়। আল সিবিবি পরিবার সাওয়ান ও দুল্কায়দা জুড়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একটি বিশেষ পরিষ্কার মিশ্রণ জমজমের পানি থেকে প্রস্তুত করা হয় এবং ব্যয়বহুল তেল এতে ব্যবহার করা হয়। এই পরিষ্কার করার অনুষ্ঠানে গভর্নর কয়েকজনকে আমন্ত্রণ জানান। ক্বাবার দরজা সকলের জন্য উন্মুক্ত। প্রথম দিকে থেকে ক্বাবার ভিতরে ঢুকতে পারত এবং ভেতরে এবাদত করতে পারত। কেননা তখন ক্বাবার দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। দিন দিন যেহেতে ক্বাবার তাওয়াফ কারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাই কাবার ভিতরে এখন আর সবাই প্রবেশ করতে পারে না।

ক্বাবার দরজা এখন বিশেষ অতিথিদের জন্য মাঝে মাঝে খোলা হয়। ক্বাবার তোয়াব কখনো থামে না। ক্বাবার বিষয়ে সব থেকে বেশি আশ্চর্যের বিষয় হলো ক্বাবার তোয়াব কখনো বন্ধ হয় না। ইতিহাস ঘাঁটলে এমন ঘটনা পাওয়া যায় যে বন্যার সময় মানুষ সাঁতার কেটে কেটে তোয়াব করেছে তবুও ক্বাবা কখনো বন্ধ হয়নি। আর ভবিষ্যতেও হবে না বলেই আশা করি। কারণ আল্লাহ তায়ালার এক নিদর্শন হল পবিত্র ক্বাবা শরীফ, যেখানে যাওয়ার জন্য প্রতিটি মুসলিম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে।

দৈনিক বগুড়া

সর্বশেষ: