সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন নিয়মে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা, বদলাবে ধরন

নতুন নিয়মে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টা, বদলাবে ধরন

সংগৃহীত

নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ফিরছে না ‘পুরোনো ধাঁচের পরীক্ষা’। তবে দশম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ থাকছে। নতুন পদ্ধতিতেও পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের— লিখিত মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ আর কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ। 

নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা রাখাসহ পাঁচ দফা সুপারিশ প্রস্তুত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। তাতে এমন ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। কমিটি তাদের এই সুপারিশ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেবে। তারপর আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় অনুমোদনের জন্য তা তোলা হবে। সেই কমিটির অনুমোদন পেলে নতুন মূল্যায়ন কাঠামো সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

গত ৫ মার্চ গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের কমিটির প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রম ভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত (পরীক্ষা) মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। এছাড়া মূল্যায়নে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে স্কুল ভিত্তিক ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে। 

এ ছাড়া মূল্যায়ন অ্যাপ নৈপুণ্য হালনাগাদ করা, চূড়ান্ত মূল্যায়নে সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টের ৭ পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচক অভিভাবক ও অংশজনদের অবহিত করারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

নতুন শিক্ষাক্রম গত বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে বাস্তবায়ন করা হয়। আর চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে বর্তমানে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। এর একটি বছরজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, প্রাক্–প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। এ তিন শ্রেণিতে হবে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে।

এসএসসি পরীক্ষা এখনকার মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীন হবে। কমিটি পরীক্ষার মোট সময় কয় ঘণ্টা হবে সে বিষয়ে সুপারিশ অংশে কিছু উল্লেখ করেনি। তবে কমিটি-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি হবে পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে লিখিত অংশের সময় কত এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের জন্য সময় কত হবে, তা বিষয়ের চাহিদা অনুযায়ী ঠিক করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক–শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট দিনে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে না। 

নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর কিংবা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করা হবে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ মানে উন্নতি প্রয়োজন।

শিক্ষাবিদ–অভিভাবকসহ বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ, অসন্তোষ এবং লিখিত পরীক্ষা যুক্ত করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনেই নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেন মহিবুল হাসান চৌধুরী।

সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ